ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

একাত্তরের গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানিদের বিচারে বাধা নেই: শাহরিয়ার কবির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
একাত্তরের গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানিদের বিচারে বাধা নেই: শাহরিয়ার কবির

ঢাকা: ভিয়েনা কনভেনশনে সই করা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানি সেনাদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। এমনটি বলেছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

‘১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের ভবন নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম হিসেবে সোমবার (২৯ মে) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিশ শতকের প্রেক্ষাপটে ‘একাত্তরের গণহত্যা ও বিচার আন্দোলন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় শাহরিয়ার কবির বলেন, ভিয়েনা কনভেনশনের একটি ধারায় বলা হয়েছে, বহু অপরাধ ক্ষমা করা যায় না, তার মধ্যে একটি গণহত্যা। ভিয়েনা কনভেনশনের ওই ধারাতেই একাত্তরে গণহত্যার দায়ে পাকিস্তানিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যেতে পারে। আন্তর্জাতিক আইনের ধারায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে বাধা নেই। এ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ সারা বিশ্বে যে গণহত্যা চলছে, তা নিরুৎসাহিত হবে।

জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় জাদুঘরের এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন গণহত্যায় শহীদদের তালিকা দেখাতে। মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাস নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা বন্ধ করতে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি বিচারপতি মো. গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃত ইতিহাস অস্বীকার অপরাধ আইনের খসড়া তৈরি করে আইন কমিশনে জমা দিয়েছিলাম। সেই আইন প্রণয়নের দাবি জানাই। পাশাপাশি ব্যক্তি অপরাধের পাশাপাশি সাংগঠনিক পর্যায়ের অপরাধের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আবেদনও করছি আমরা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হোক।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাতে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে বেগ পেতে হবে। পাশাপাশি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে রায়গুলো দিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা করা উচিত। সেসব রায় ও পর্যবেক্ষণের অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিলে গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতেও সহায়ক হবে।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত ও জাতীয় পতাকা- বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য এ তিনটি বিষয় সুপ্রতিষ্ঠিত ও সর্বজনবিদিত। পৃথিবীর কোনো দেশেই এসব বিষয়ে কোনো বিরোধ ও মতভেদ নেই। তাই এসব বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না এবং এ বিষয়ে কোনো আপস নেই। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কখনো ভুলে যাওয়া যাবে না। মাত্র নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে যে পরিমাণ গণহত্যা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা বিরল।  

মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, গণহত্যার সঠিক ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীরের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সেজন্য তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৩
এইচএমএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।