ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টিপু হত্যাকাণ্ডের মূল সমন্বয়ক মুসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০২৩
টিপু হত্যাকাণ্ডের মূল সমন্বয়ক মুসা ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ও অন্যতম এলাকা মতিঝিলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুন হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)।

আর সরাসরি শ্যুটার হিসেবে সম্পৃক্ত ছিলেন মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪) ও শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫)।

টিপু হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নের সরাসরি শ্যুটার হিসেবে সম্পৃক্ত মাসুম মোহাম্মাদ আকাশকে (৩৪) বগুড়া থেকে এবং শ্যুটার শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীমকে (৩৫) সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মূল সমন্বয়কের সুমন সিকদার ওরফে মুসাকে (৪৩) ইন্টারপোলের সহযোগিতায় ওমান থেকো গ্রেপ্তার করে ফিরিয়ে আনা হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের তদন্তে উঠে আসে- টিপু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ৩৪ জন আসামি। এদের মধ্যে একজনের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় ৩৩ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চার্জশিট থেকে বাদ পড়া আসামি হলেন এক্সেল সোহেল। তবে এক্সেল সোহেল এর নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে তার নামও সম্পূরক হিসেবে চার্জশিটে সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মধ্যে নয় আসামি এখনও পলাতক রয়েছেন।

সোমবার (০৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুন অর রশীদ।

তিনি বলেন, এই খুনের তদন্তে আমরা প্রায় ২৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ অনুসারে জবানবন্দি দিয়েছেন তিনজন আসামি। তারা হলেন, মাসুম মোহাম্মাদ আকাশ (৩৪), নাসির উদ্দিন মানিক ও সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩)।

আধিপত্য ও আর্থিক সংশ্লিষ্টতা টিপু হত্যার বড় কারণ ছিল। তবে টিপু হত্যায় যারাই জড়িত ছিলেন তাদের কারও রাজনৈতিক পরিচয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যারাই সম্পৃক্ত বা টিপুর খুনের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রত্যেককে মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করে সোমবার (০৫ জুন) আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

টিপু হত্যা মামলার তদন্ত সম্পর্কে গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, জাহেদুল ইসলাম টিপু মতিঝিলের আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন। অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। ১৪ মাস আগে টিপু খুন হন। তার হত্যাকাণ্ডের পর ডিবি মতিঝিল টিম তদন্ত কাজ শুরু করে। প্রথম কয়েকদিনের মধ্যে আমরা মাস্টারমাইন্ড পর্যায়ের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। টিপু একা খুন হননি। তাকে খুন করতে আসা শ্যুটারদের গুলিতে খুন হন কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি (২২)।

হারুন অর রশিদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা শ্যুটার আকাশকে বগুড়া থেকে ও মোল্লা শামীমকে ইন্ডিয়া পালানোর প্রাক্কালে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছি। গ্রেপ্তার ২৪ জনের সঙ্গে কথা বলে ও সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে যে, টিপু হত্যা পরিকল্পিত। টিপুকে হত্যার জন্য বেইলী রোড, বায়তুল মোকাররম এলাকা ও হোটেলসহ বিভিন্ন এলাকায় মিটিং করেছেন জড়িতরা। হত্যার পর প্রথম এক মাসে অধিকাংশ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরও যেহেতু এটা স্পর্শকাতর ঘটনা। সেজন্য কোনো ধরণের ভুল বা ক্রুটি না হয় সেজন্য তদন্তে সময় নেওয়া হয়। আজ সেটার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, যারা জড়িত, অপরাধী, সাক্ষ্য প্রমাণ পারিপার্শ্বিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে শুধু তাদের নামই মামলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত না তাদের কারও নাম সংযুক্ত করা হয়নি। অপরাধীদের রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা আমরা করিনি।

টিপু হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার যারা:

জিসান ওরফে জিসান আহাম্মেদ ওরফে মন্টু ওরফে এমদাদুল হক (৫০), জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক (৪৫), সুমন সিকদার ওরফে মুসা (৪৩), মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ (৩৭), শামীম হোসাইন ওরফে মোল্লা শামীম (৩৫), মারুফ রেজা সাগর ওরফে সাগর (৪০), আরিফুর রহমান সোহেল ওরফে ঘাতক সোহেল (৪৫), জুবের আলম খান ওরফে রবিন ওরফে রেলওয়ে রবিন (৫১), হাফিজুল ইসলাম ওরফে হাফিজ (৫০), তৌফিক হাসান ওরফে বাবু ওরফে বিডি বাবু (৩৬), মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু (৪০), নাসির উদ্দিন ওরফে মানিক (৪৭), মশিউর রহমান ওরফে ইকরাম (৩৬), ইয়াসির আরাফাত সৈকত (৩৩), আবুল হোসেন মোহাম্মদ আরফান উল্লাহ ইমাম খান ওরফে দামাল (৪৯), সেকান্দার সিকদার ওরফে আকাশ (২৬), খাইরুল ইসলাম মাতব্বর ওরফে খোকা (88), আবু সালেহ শিকদার ওরফে শ্যুটার সালে (৩৮), নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির (৩৮), ওমর ফারুক (৫২), সোহেল শাহরিয়ার (৪১), মোহাম্মদ মারুফ খান (২৮), ইসতিয়াক আহম্মেদ জিতু (৩৯), ইমরান হোসেন ওরফে জিতু (৩২), রাকিবুর রহমান ওরফে রাকিব (৩১) ও মোরশেদুল আলম পলাশ।
 
এখনও পলাতক রয়েছেন যারা:

এনামুল ইসলাম ওরফে এক্সেল সোহেল (৪৮), রিফাত হোসেন (৩৮), রানা মোল্লা (৪০), আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব (৩৫), সামসুল হায়দার ওরফে উচ্ছল উজ্জল (৪১), কামরুজ্জামান বাবুল ওরফে বাবুল তালুকদার (৬২), গোলাম আশরাফ তালুকদার (৬৮) ও মারুফ আহমেদ মনসুর (৫৭)।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০২৩
এসজেএ/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।