ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-ওসির বিরুদ্ধে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার-ওসির বিরুদ্ধে

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া দুই আসামিকে থানায় আটকে রেখে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে।  

এ ঘটনায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনে পদায়ন করা হয়েছে।

 

শুক্রবার (৯ জুন) বিকেলে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।  

এর আগে গত ২ জুন ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠাণ্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে শরীয়তপুরের সুপার মো. সাইফুল হক সত্যতা প্রমাণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

পুলিশ, ভুক্তভোগী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার, কান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে তিন আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন। জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে সাদ্দাম, বকুলসহ আসামি সাইদুল শেখ ও আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদার বাসায় যান। ওই রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেই বাসায় গিয়ে হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির, ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারীসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য।

এসময় সাদ্দাম তাদের জামিনের কাগজ দেখানো মাত্রই তা ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির। পরে সাদ্দাম ও বকুলকে লাথি, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড়সহ পুলিশ সদস্যরা লাঠি, কাঠ, হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে প্লাস দিয়ে তাদের হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলেন। এরকম নির্যাতন চলে ৩০ মে রাত ১টা থেকে ৩১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত। কিছুক্ষণ পর গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে ওই ৪ জনের চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে আনা হয়। পরে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল ও আনোয়ারকে দুটি পৃথক স্থানে নেওয়া হয়।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি এসময় সাদ্দাম-বকুলকে বলেন, সাইদুল ও আনোয়ারকে ক্রসফায়ার দিয়েছি। তোরা ৭২ লাখ টাকা দিবি, তা নাহলে তোদেরও ক্রসফায়ার করা হবে। এভাবে সারাদিন রেখে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় নিয়ে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বেত ও কাঠ, কোদালের বাট, লাঠি দিয়ে আবার বেধড়ক মারা হয় সাদ্দাম ও বকুলকে। সারারাত চলে এ নির্যাতন। এতেও তারা ক্ষান্ত হননি। টাকার জন্য বকুলের স্ত্রী সানজিদা, দুই বছরের সন্তান, বাবা রশিদ চোকদার, মা রমেলা ও চাচাতো ভাই আবু জাফর ঠাণ্ডুকে থানায় এনে সারারাত আটকে রাখা হয় এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

পরে বকুলের আত্মীয়-স্বজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে মোট ৭২ লাখ টাকার চেক দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি পায় তারা। এই দুই দিনে যন্ত্রণায় তারা চিৎকার করলেও তাদের খাবার ও ওষুধ দেয়নি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি। পরে ১ জুন বিকেলে সাদ্দাম ও বকুলসহ চারজনকে শরীয়তপুর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। এরপর ৬ জুন বিকেলে সাদ্দাম ও বকুলসহ চারজনই আদালত থেকে জামিন পান।

ছিনতাই মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মে দুপুরে পদ্মা সেতু জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা এলাকার এক্সপ্রেসওয়ের সোহাগ পরিবহন থেকে জাজিরা উপজেলার বাসিন্দা শাহীন আলম শেখ (২০) ও সেকেন্দার মাদবরকে (৫১) জোরকরে নামিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা বিদেশি ডলার, মোবাইলসহ অন্য জিনিসপত্র নিয়ে যায় স্থানীয় সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ ১০-১১ জন। এ ঘটনায় ২৩ মে শাহীন আলম শেখ বাদী হয়ে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় সাদ্দাম ও বকুলসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।

ভুক্তভোগী সাদ্দাম চোকদার ও বকুল চোকদার বলেন, আমাদের ৮ জনের নামে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। সেই মামলায় আমরা তিনজন হাইকোর্ট থেকে জামিনে আসি। তবুও আমাদের থানায় ও একটি বাড়িতে আটকে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান। পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক দিই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসিকে। আমরা এর বিচার চাই।

তবে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ছিনতাই মামলার বাদীপক্ষ তাদের মারধর করেছে। এ বিষয়ে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চেকের বিষয়েও আমার জানা নেই।

অন্যদিকে শরীয়তপুর জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) রাসেল মনিরের বক্তব্যের জন্য বারবার মোবাইলে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক বলেন, গত ২৩ মে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়। এই মামলার প্রেক্ষিতে পরে কিছু ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি।  অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সত্যতা প্রমাণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের রিপোর্ট তিন কার্যদিবসে জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে তাদের সম্পৃক্ততা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এছাড়া এ ঘটনায় পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে শরীয়তপুর পুলিশ লাইনে পদায়ন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।