ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কারাগার থেকে বেরিয়ে যেখানে গেলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
কারাগার থেকে বেরিয়ে যেখানে গেলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান

ঢাকা: দীর্ঘ প্রায় ৩২ বছর কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ ২৬ জনের ফাঁসির দেওয়া আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভূঁইয়া।

রোববার (১৮ জুন) বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

'জল্লাদ' শাহজাহানকে কারাগার থেকে নিতে তার পরিবারের আপন কেউ না এলেও কারাগারে পরিচয় হওয়া চারজন তাকে নিতে এসেছিলেন। তারা নিজেদের শাহজাহানের দূর সম্পর্কের ভাগিনা-ভাগনি পরিচয় দিয়েছেন। তারা শাহজাহানকে রাজধানীর নর্দায় নিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

শাহজাহানকে নিতে আসা রকি দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, রাজনৈতিক মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময় শাহজাহানের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। আমরা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মেঘনা ভবনের চতুর্থ তলার আট নম্বর রুমে একসঙ্গে ছিলাম। শাহজাহান খুবই মিশুক মানুষ।

তিনি বলেন, আমার বাসা নর্দায়। শাহজাহানের এক বড় বোন আছে শুনেছি। কিন্তু যোগাযোগ নেই। তাই তাকে আপাতত আমার বাসায় নিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে কারাগার থেকে বেরিয়ে শাহজাহান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমার একটি বোন ও ভাগিনা আছে। কিন্তু জেলে আসার পর আজ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়নি। দুই-একবার ফোনে কথা হয়েছে। কিন্তু তারা কখনো দেখা করতে আসেনি।

কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবেন জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, কারাগারে আমার সঙ্গে একজন আসামি ছিলেন। তিনি আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছেন, আমিও তার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছি। আমি তাকে বলেছি কোথায় যাবে? এখন তার সঙ্গেই যাচ্ছি।

এ সময় তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে  শাহজাহান বলেন, আমার বাড়ি, ঘর নেই। এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি যে এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি। আমি এখন কি করে খাবো? কোথায় যাবো? কি করবো? আমার এখন আর কিছু করার বয়স নেই। আমার ৭৪ বছর বয়স চলে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, আমাকে যেন বাড়ি-ঘর ও একটি কর্মসংস্থান দিয়ে চলার মতো কিছু করে দেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন।

‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ছিলেন। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, শাহজাহান ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। দুটি মামলায় তার ৪২ বছরের সাজা হয়েছিল। পাশাপাশি সেসব মামলায় জরিমানা হয়েছিল পাঁচ হাজার করে ১০ হাজার টাকা।

কিন্তু কারাগারের মধ্যে ভালো কাজ এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়। পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে।

ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয় মাস দুই দিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দি জীবন কাটানোর পর এখন তিনি মুক্ত।

কারাগারের তথ্য অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন, যুদ্ধাপরাধী ছিলেন চারজন, জেএমবি ছিলেন দুইজন ও অন্যান্য আলোচিত মামলার আসামি ছিলেন ১৪ জন।

শাহজাহানের দুই মামলার তথ্য:

স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ১৮/১৯৯২, মানিকগঞ্জ ০৩(১২)৯১, ধারা- অস্ত্র আইন ১৯(এ)। এ মামলায় শাহজাহানের ১২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সাজা হয়েছিল। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে আরও ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায় হয়েছিল সেই মামলায়। যা কার্যকর শুরু হয় ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে।

অপর মামলাটি হলো: দায়রা ৪০/৯২, মানিকগঞ্জ ২(১২)৯১, ধারা-৩৯৬ দ:বি। এ মামলায় তার সশ্রম অর্থাৎ ৩০ বছরের সাজা হয়। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাস কারাদণ্ডের রায় হয়।

দুই মামলায় তার সাজা মওকুফ (রেয়াত) হয় ১০ বছর পাঁচ মাস ২৮ দিন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।