ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানির পশু বিক্রির প্রস্তুতি চলছে গাবতলীর হাটে

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৭ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
কোরবানির পশু বিক্রির প্রস্তুতি চলছে গাবতলীর হাটে

ঢাকা: দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় এ ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতার সময় হাতে আছে দুই সপ্তাহেরও কম সময়।

রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে বড় পরিসরে বসবে কোরবানির পশু বিক্রির হাট। এ লক্ষ্যে এলাকাটিতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

রোববার (১৮ জুন) গাবতলী বাস টার্মিনাল সংলগ্ন স্থায়ী গবাদি পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন নির্মাণ শ্রমিক থেকে শুরু করে হাট সংশ্লিষ্টরা। ঈদুল আযহা উপলক্ষে হাট সাজানোর কাজ করছেন তারা। হাটের স্থায়ী অংশের কাজ মোটামুটি শেষ; দক্ষিণ-পূর্ব পাশের বর্ধিতাংশে চলছে বাঁশের অবকাঠামো তৈরির কাজ। সেখানে ত্রিপল-শামিয়ানা লাগানো ও লাইটিংয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। শেষ হয়নি প্রধান সড়কের পাশে থাকা মূল গেটের কাজও।

এ অবস্থায় হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন তাদের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। তবে নির্মাণ শ্রমিকরা বলছেন, কাজ মাত্র অর্ধেক শেষ হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৭ দশমিক ৫ একর আয়তনের গাবতলীর পশুর হাটের চার ভাগের দুই ভাগে বাঁশের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যে এসব অবকাঠামোতে ত্রিপল ও শামিয়ানা লাগানোর কাজ শুরু হবে। লাইটিংয়ের কাজ শুরু হবে তারও পরে। পুরোপুরি হাট সাজাতে ২৪-২৫ জুন পর্যন্ত সময় লাগবে।

হাটের স্থায়ী অংশ কোরবানির পশু বিক্রির জন্য মোটামুটি প্রস্তুত। তবে দক্ষিণ-পূর্ব পাশের ইট-বালু বিক্রির গদিগুলোয় এখনো বাঁশের অবকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। এ জায়গায় অর্ধেক অংশে মাত্র বাঁশের ফ্রেমিং করা হয়েছে। বাকি জায়গায় এখনো ইট ও বালু রাখা আছে।

নির্মাণ শ্রমিক মো. শাজাহান বলেন, ১০-১২ দিন আগে হাট প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন তারা। এখন বাঁশের ফ্রেমিংয়ের কাজ চলছে। এটি শেষ হলে ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙানোর কাজ শুরু করবেন।

একই কথা বলেন আরেক নির্মাণ শ্রমিক কামাল হোসেন। তিনি বলেন, গত ৮ জুন থেকে কাজ শুরু করেছেন তারা। এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। স্থায়ী অংশের প্রস্তুতি প্রায় শেষ হলেও বর্ধিতাংশের কাজ অনেক বাকি। বর্ধিতাংশে ইট-বালু না সরানো পর্যন্ত বাঁশের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছে না। যতখানি জায়গা প্রস্তুত হয়েছে, তাতে তিন-চার দিন পর থেকে পশু রাখা যাবে।

হাটের স্থায়ী অংশ ঘুরে দুয়েকজন ব্যাপারীকে কোরবানির পশু নিয়ে আসতে দেখা যায়। দুয়েকজন ক্রেতাও দেখা গেছে এ সময়। তাদের মধ্যে একজন সরকারি চাকরিজীবী ও মিরপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা আবরারুল হক। হাট জমেনি, এখনই পশু কিনতে এসেছেন- জানতে চাইলে আবরারুল বলেন, আমরা তো সরকারি চাকরি করি। প্রতিদিন সময় পাওয়া যাবে না। তাই আজকে সুযোগ পেয়ে চলে এলাম দেখতে। যদি ভালো লাগে এবং দরদামে মিলে যায় তাহলে কোরবানির গরু কিনে ফেলবো। আর এখন হাটে মানুষজন নেই তাই একটু স্বস্তিতে দেখতে আসা।

পেশায় ব্যবসায়ী হাজী মো. মনির হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, আমাদের একটা বাজেট নির্ধারিত থাকে। এর মধ্যেই যাতে কোরবানির পশু কিনতে পারি তাই আগেই আসা। পছন্দ হলে কিনে ফেলব। এবার গরুর দাম বেশি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কুষ্টিয়া থেকে গাবতলীর হাটে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারী কুদ্দুস সরকার বলেন, এখনো হাটে সেভাবে গরু আসেনি। আরও চার-পাঁচ দিন পর হাট জমজমাট হবে। যাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা আছে, তারা এখন থেকেই কেনা শুরু করেছেন। যাদের জায়গা নেই, তারা শেষ দিকে আসবেন।

এ বিষয়ে গাবতলী গবাদি পশুর হাটের ইজারাদার মো. লুৎফর রহমানের ম্যানেজার আবুল হাসেম বলেন, সারা বছরই স্থায়ী হাটে পশু বিক্রি হয়। গাবতলী যেহেতু ঢাকার সবচেয়ে বড় হাট, তাই কোরবানির ঈদের সময় বর্ধিতাংশেও পশু বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। কাজ চলছে, প্রস্তুতিও প্রায় শেষের পথে।

কিন্তু হাটের বর্ধিতাংশে এখনো অর্ধেকের বেশি কাজ বাকি, প্রশ্ন করলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আগামী সাত-আট দিনের মধ্যে যেসব গবাদি পশু আসবে সেগুলো স্থায়ী অংশে রাখা যাবে। তারপর পশুর সংখ্যা বাড়লে বর্ধিতাংশে রাখা হবে। তখন সেখানে ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙানোর ব্যবস্থা করা হবে। এখনই যদি ত্রিপল ও শামিয়ানা টাঙানো হয়, তাহলে বাতাসে উড়ে যেতে পারে।

কোরবানির পশু বিক্রির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাপারীরা কোরবানির পশু আনা শুরু করেছে। কম-বেশি বেচাকেনাও হচ্ছে। তবে যারা একেবারেই প্রান্তিক খামারি, তারা ঈদের তিন-চারদিন আগে আসবেন।

এবার গাবতলী গবাদি পশুর হাটের নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আবুল হাসেম বলেন, হাটে যাতে বৃষ্টি এবং কাঁদায় ক্রেতা-বিক্রেতার কোনো সমস্যা না হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইট ও বালু বিছানো হয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য সার্বক্ষণিক আমাদের সদস্যরা থাকবেন। এছাড়া এবার ক্রেতাদের সুবিধার্থে পুরো হাটে ১১টি হাসিল ঘর রাখা হয়েছে।

নিরাপত্তার জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের পাশাপাশি ১২০০ স্বেচ্ছেসেবি হাটে থাকবে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব ও পুলিশের দুটি বুথ থাকবে। ওয়াচ টাওয়ার থাকবে ৭ থেকে ৮টি। হাটজুড়ে চেকপোস্ট থাকবে চারটি। এছাড়া সার্বক্ষণিক মাইকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে এসে অভিযোগ জানাতে পারে।

জাল টাকা শনাক্তের জন্য প্রতিটি হাসিল ঘরে পর্যাপ্ত মেশিন থাকবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, হাসিল ঘরের পাশাপাশি ১০ থেকে ১২টি ব্যাংকের বুথ থাকবে। কারও সন্দেহ হলে সেসব বুথ বা হাসিল ঘরে গিয়ে টাকা পরীক্ষা করেতে পারবে। এছাড়া পশুদের চিকিৎসায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন ও চিড়িয়াখানার চিকিৎসকসহ আলাদা আলাদা তিনটি টিম থাকবে।

কবে থেকে হাট সরগম হবে জানতে চাইলে আবুল হাসেম বলেন, আগামী ১৯-২০ জুনের পর থেকে হাট সরগম হতে শুরু করবে। তবে সবচেয়ে বেশি জমজমাট হবে ঈদের সরকারি ছুটি শুরুর পর। এবার কোরবানির পশুর হাসিল ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি ১০০ টাকায় ৫ টাকা ও এক হাজার টাকা ৫০ টাকা হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে। এ হাটে থাকা-খাওয়াসহ বিক্রেতারা যে সুযোগ সুবিধা পায়, সেটা আর কোনো হাটে পায় না। নতুন, পুরনো সব ব্যাপারীকেই এখানে পশু বিক্রি করার সুযোগ দেওয়া হয়। এখান থেকে পশু বিক্রি করে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।