রাজশাহী: ঘরের ভেতর ব্যাংকের মতো ভল্ট বানিয়ে মজুদ করে রাখা হয়েছিল হেরোইন। সেই ভল্ট ভেঙে সাড়ে সাতকেজি হেরোইন জব্দ করেছে পুলিশ।
এছাড়া ভল্ট থেকে হেরোইন বিক্রির সাড়ে ২৪ লাখ টাকাসহ ২৫৮ গ্রাম স্বর্ণালংকার জব্দ করেছে পুলিশ। জব্দ করা হেরোইনের আনুমানিক বাজার মূল্য সাড়ে সাতকোটি টাকা এবং স্বর্ণালংকারের মূল্য ২০ লাখ টাকা।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন গণমাধ্যম কর্মীদের এই তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার মাদক কারবারির নাম জিয়ারুল ইসলাম (৩৫)। তিনি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সদর পৌরসভার আচুয়া কসাইপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফের ছেলে।
রাজশাহী পুলিশ সুপার জানান, রোববার (১৮ জুন) গভীর রাতে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সদর পৌরসভার আচুয়া কসাইপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে উদ্ধার করা সর্বোচ্চ হেরোইনের চালান। স্মরণকালের মধ্যে এই উপজেলা থেকে এতো বড় হেরোইনের চালান এর আগে উদ্ধার হয়নি।
তিনি বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রোববার (১৮ জুন) দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার নির্দেশনায় গোদাগাড়ী সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা ও ওসি কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস দল গোদাগাড়ী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের আচুয়া কসাইপাড়া গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় সাড়ে সাতকেজি হেরোইন, ১৮ বোতল ফেনসিডিল, হেরোইন বিক্রির ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২৫৮ গ্রাম স্বর্ণালংকারসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, অভিযানের প্রথম পর্যায়ে জিয়ারুলের বাড়িতে তল্লাশি করে ৫০০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়। এরপর সন্দেহ হলে বাড়িতে আবারও তল্লাশি করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের তল্লাশিতে তার বাড়ির ভেতরে বিশাল একটা আধুনিক ও সুরক্ষিত স্টিলের তৈরি ভল্ট পাওয়া যায়। ভল্টের চাবি চাইলে জিয়ারুল চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ওই ভল্ট ভাঙার জন্য ফায়ার সার্ভিসকে ডাকা হয়।
এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যরাও ভল্ট ভাঙার কাজে নিয়োজিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার যৌথ প্রচেষ্টায় ভল্টটি ভাঙা হয়। এরপর তার ভেতর থেকে বাকি সাতকেজি হেরোইন, টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারের বৈধ হিসাব দিতে পারেননি জিয়ারুল। তাই এগুলো উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে জব্দ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে জিয়ারুল জানিয়েছেন যে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে হেরোইনের ব্যবসা করেন। ভারত সীমান্ত থেকে বাহকের মাধ্যমে হেরোইন এনে তার বাড়িতে মজুদ করেন। পরে সুবিধা মতো সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। এই ব্যবসা করে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন।
রাজশাহী পুলিশ সুপার বলেন, নিজের মাদক ব্যবসা থেকে অর্জিত অর্থ, স্বর্ণ ও হেরোইনের নিরাপদ হেফাজতের জন্য তিনি তিন বছর আগে লক্ষাধিক টাকা খরচ করে এই ব্যাংকের মত করে স্টিল দিয়ে তৈরি করা শক্তিশালী ভল্টটি সংগ্রহ করেন। আর উদ্ধার হওয়া ফেনসিডিল তিনি নিজের সেবনের জন্য রেখেছিলেন।
তিনি জানান, রাজশাহী জেলা তথা বাংলাদেশের মাদক উদ্ধারের ইতিহাসে এত বিপুল পরিমাণ হেরোইন উদ্ধারের নজির খুব কম। মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ১৯, ২০২৩
এসএস/এসআইএ