নোয়াখালী: নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে টিকটক করতে নিষেধ করা ও বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসার জন্য চাপ সৃষ্টি করে বিপাকে পড়েছেন এক শিক্ষক। এ ঘটনার পর ওই ছাত্রীকে হয়রানি করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ করে ওই শিক্ষককে সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় করার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া ওই শিক্ষকের ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি কৌশলে হ্যাক করে শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে কটাক্ষমূলক স্ট্যাটাস দিয়ে তাকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহ্ মাজেদ হোসেন রনি ওটারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।
এ ঘটনায় হয়রানির শিকার শিক্ষক কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেছেন। এসব ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছেন কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নের ওটারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মমিনুল হক জানান, দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আফরিন সুলতানা প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহকারী শিক্ষক শাহ্ মাজেদ হোসেন শ্রেণিকক্ষে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে তার সহপাঠীরা জানায় সে রাত জেগে টিকটক করে ও সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘুমে থাকে। এছাড়া তার হাতের নখগুলোও অনেক বড় করে রেখেছে সে।
ওই সময় শিক্ষক রাত জেগে টিকটক করা, লেখাপড়ায় অমনোযোগী, বিদ্যালয়ে অনিয়মিত উপস্থিতি এবং নখ বড় রাখার কুফল বর্ণনা করে তার হাতের নখ ধরে কাটার নির্দেশ দেন। এতে ছাত্রীটি শ্রেণিকক্ষে তার সহপাঠীদের সামনে অপমান বোধ করে। বাড়িতে গিয়ে তার অভিভাবকদের ঘটনাটি জানায়।
এরপর ছাত্রীটির চাচা মেজবা উদ্দিন রাকিব ওই ঘটনায় গত বছর ১৫ অক্টোবর হয়রানির অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনার পর গত শনিবার (১৭ জুন) সকালে বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান কিছু শিক্ষার্থী বিদ্যালয় সড়কে একটি মানববন্ধন করে। এছাড়াও চলতি বছর ১৩ জুন ওই শিক্ষকের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি কে বা কারা হ্যাক করে শিক্ষকের বন্ধু এবং পরিচিতজনদের কাছে বিকাশে টাকা দাবি করে এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিয়ে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করে স্ট্যাটাস দেয়।
এতে ওই শিক্ষক বিব্রত বোধ করেন। এ ঘটনায় তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেন।
শিক্ষক শাহ্ মাজেদ হোসেন রনি তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শ্রেণিকক্ষে ছাত্রীটির অনুপস্থিতির বিষয়, রাত জেগে টিকটক করা, পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া এবং তার হাতের বড় বড় নখ রাখার কুফল সম্পর্কে বলে তার নখ কাটার নির্দেশ দেই। ওই সময় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে তার নখ ধরে তা কেটে ফেলার নির্দেশ দেই। ওই ঘটনার জেরে ছাত্রীটির চাচা আমার বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন যা তদন্তে প্রমাণিত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, একটি চক্র আমাকে বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত করতে অপচেষ্টা করছেন। তবে তারা কারা আমি জানি না। গত ১৩ জুন কে বা কারা আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক করে শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তিপূর্ণ কথা লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত বোধ করছি।
এ ঘটনায় আমি ১৪ জুন কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেছি এবং তা তদন্তাধীন অবস্থায় আছে, বর্তমানে আমি বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান জানান, শিক্ষকের ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার ঘটনায় থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে।
কবিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতিমা সুলতানা জানান, স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি মোবাইল ফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে গত ২০ জুন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার জন্য পাঠানো হয়। এ ঘটনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
আরএ