ঢাকা, শনিবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিএনপি কি সেন্ট মার্টিন বিক্রি করে ক্ষমতা চায়: শেখ হাসিনা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩
বিএনপি কি সেন্ট মার্টিন বিক্রি করে ক্ষমতা চায়: শেখ হাসিনা কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং

ঢাকা: বিএনপি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায় কি না জানতে চেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ লিজ দিলে তারও ক্ষমতায় থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না।

তবে দেশের স্বার্থ বিক্রি করে তিনি কখনোই এই কাজ করবেন না।

সাম্প্রতিক সুইজারল্যান্ড ও কাতার সফর নিয়ে বুধবার (২১ জুন) দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল, কীভাবে? তারা তো গ্যাস বিক্রি করার মুচলেকা দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিল। তাহলে এখন তারা দেশ বিক্রি করবে? নাকি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বিক্রি করার মুছলেকা দিয়ে আসতে চায়। ’

দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় আসতে চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এইটুকু বলতে পারি আমি জাতির পিতা শেখ মুজিবের কন্যা, আমার হাত দিয়ে এই দেশের কোনো সম্পদ কারো কাছে বিক্রি করে আমি ক্ষমতায় আসতে চাই না। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিলে আমিও ক্ষমতায় থাকতে পারতাম। আর এখনো যদি আমি বলি যে না ওই সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বা আমাদের দেশ কাউকে লিজ দেবো তাহলে আমার ক্ষমতায় থাকার কোনো অসুবিধা নাই। আমি জানি সেটা। কিন্তু আমার দ্বারা সেটা হবে না। ’

তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে খেলতে দেবো না। আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই। ’

অন্য দেশকে আক্রমণ করতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর তাবেদারি করবে, দেশের মাটি ব্যবহার করে অন্য দেশে আক্রমণ করবে, আমার দেশকে নিয়ে খেলবে, এটা অন্তত আমি হতে দিতে পারি না। এটা আমি হতে দেবো না। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি, আমরা শান্তিপূর্ণ সহযোগিতায় বিশ্বাস করি। ’

শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার উদাহরণ হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে যে ১০ লাখের মতো রিফিউজি এসেছে তাতে তো আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে ঝগড়া করিনি। এরা যাতে ফেরত যায় তার জন্য আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুরোধ করছি, কিন্তু আমরা তো ঝগড়া বা যুদ্ধ করতে যাইনি। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়, এই নীতিতে বিশ্বাস করি, সেটাই মেনে চলি। ’

বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যে বিএনপিসহ কিছু দল মাঠে নেমেছে, তাদের অসুবিধাটা কোথায়? সমস্যাটা কী?’

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনকালীন আমাদের বিরোধী দল থেকে নানা প্রস্তাব। এখন আবার তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে খালেদা জিয়ারই উক্তি ছিল- পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নাই। ’

তিনি বলেন, ‘এই পদ্ধতিটা তারাই নষ্ট করে, তারাই কিন্তু এটা রাখেনি। সেটাকেই আবার তারা ফেরত চাচ্ছে অথচ উচ্চ আদালতের রায় আছে, সেই মোতাবেক আমাদের সংবিধানও সংশোধন করা হয়েছে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান আরেকজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান দ্বারাই প্রতিস্থাপিত হবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কেউ আসতে পারবে না। এটা যেমন উচ্চ আদালতের রায় আছে, আমাদের সংবিধানেও কিন্তু আছে। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সবাই জানে, জানার পরেও আমি জানি না কেন এই সাংবিধানিক জটিলতা সৃষ্টির কেন চেষ্টা করা হচ্ছে। উদ্দেশ্যটা কী? তার মানে এই গণতান্ত্রিক ধারাটাকে নষ্ট করা। দীর্ঘ সাড়ে ১৪ বছর বাংলাদেশ যে সুষ্ঠুভাবে চলছে, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে সেটাকে নষ্ট করা। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী এটা কীভাবে নেবে সেটাই আমার প্রশ্ন। তারা কী গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চান, অর্থনৈতিক উন্নতি চান, দেশের মানুষের কল্যাণ চান, নাকি আবার সেই ২০০৭ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার, আবার সেই ইমার্জেন্সি, আবার সেই ধর-পাকড় সেইগুলো চান। এটা দেশের মানুষকেই বিবেচনা করতে হবে। ’

আওয়ামী লীগ সব সময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে মন্তব্য করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘অবাধ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ নির্বাচন হোক এটাতো সব সময় আমাদেরও দাবি। … আমরাই তো অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনতার ক্ষমতা জনতার হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ ভোট দেবে। যদি আমাকে ভোট দেয় আমি আছি, না দিলে নাই। এ তো বার বার বলছি। … আমি জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি, অন্য কিছু না। ’

তিনি বলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। মানুষের যদি পছন্দ হয় ভোট দেবে, না হয় না দেবে। না দিলে আমি থাকবো না। আমি কী মানুষের ভোট চুরি করতে যাবো। দুর্ভাগ্য হলো আমরা ভোটের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করলাম আর আমাদের যারা ভোট চোর বলে তারা তো ভোট ডাকাত। যাদের উত্থানই ভোট ডাকাতি করে, খুন করে। ’

নির্বাচন কবে হবে এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন সময় মতো হবে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার সুনির্দিষ্ট সময় আছে, তখন নির্বাচন হবে। ’

ভারতের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আমাদের সদ্ভাব রয়েছে। কিন্তু ভারত একটা দেশ, যার নিজের সার্বভৌমত্ব আছে, তারা কি করবে না করবে এটা সম্পূর্ণ তাদের ওপর। আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে। এইটুকু বলতে পারি। … ভারত তাদের নীতিতে তারা চলবে। এখানে আশা-নিরাশা হওয়ার কিছু নেই। ’

অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।

সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২৩/আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা
এসকে/এমইউএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।