ঢাকা: মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য হাতে রয়েছে এক সপ্তাহেরও কম সময়। কোরবানির পশু বিক্রির জন্য মোটামুটি প্রস্তুত রাজধানীর স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটগুলো।
আফতাবনগর অস্থায়ী পশুর হাটের অবস্থাও একই। তবে শুক্রবার (২৩ জুন) বিকেলে এই হাটে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের ভিড়।
এদিন বিকেলে আফতাবনগর হাট ঘুরে দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাটে কোরবানির পশু দেখতে এসেছেন। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, কেউবা আবার একা হাটে এসেছেন। তারা ঘুরে ঘুরে গরু-ছাগল দেখছেন। অনেকে বড় আকারের গরুগুলোর সঙ্গে ছবি তুলছেন। অনেকে পশুর দাম জিজ্ঞেস করছে। তবে এদের বেশিরভাগই আজ শুধু দেখতে এসেছেন।
এর বাইরে কিছু মানুষ কেনার উদ্দেশ্যেই হাটে এসেছেন। তারা কোনো গরু বা ছাগল পছন্দ হলেই সেটির দাম-দর করছেন। দামে মিললে কিনেও ফেলছেন। তবে তুলনামূলক ছোট গরুগুলোই আজ বিক্রি হচ্ছে। বেচাকেনা বাড়তে আরও দুই-তিন দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
চুয়াডাঙ্গা থেকে মাঝারি আকারের আটটি গরু নিয়ে শুক্রবার সকালেই আফতাবনগর হাটে এসেছেন বেপারী মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, সকাল থেকে এখনও একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি। সবাই শুধু দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। বিকেল থেকে হাটে মানুষের ভিড়ও বাড়ছে। তবে বেশিরভাগই শুধু দেখতে এসেছে।
মো. জামাল উদ্দিন নামের আরেক বেপারী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইল থেকে এই হাটে এসেছি। ১৬ জন মিলে ৩১টি গরু নিয়ে আসছি। সকাল থেকে হাটে কোনো মানুষই ছিল না। বিকেলের পর থেকে মানুষ আসা শুরু হয়েছে। তবে তারা কিনতে আসেন নি, শুধু দেখতে এসেছেন। রোববার (২৫ জুন) থেকে বেচা-কেনা বাড়বে। এখন শুধু মানুষ দেখবে, দাম যাচাই করবে।
এবার গরুর দাম বেশি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, গতবার যেই গরু এক লাখ টাকা বিক্রি করছি, এবার সেটা দেড় লাখেও বিক্রি করতে পারব না। আমার কাছে একলাখ ৪০ হাজার থেকে শুরু করে চারলাখ টাকার গরু আছে।
রাজধানীর বাড্ডা থেকে বন্ধুদের নিয়ে আফতাবনগর হাটে এসেছেন মিরাজুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আজ দেখতে এসেছি, দাম কেমন। যদি কোনো গরু পছন্দ হয় এবং দামে মিলে তাহলে বাসায় জানাব। সম্ভব হলে কালকেই এসে নিয়ে যাব। আজ হাটে অনেক মানুষ এলেও হাট এখনও জমে উঠেনি। এখনও অনেক গরু আসা বাকি। এবার গরুর দামও বেশি।
বনশ্রী থেকে ছেলেকে নিয়ে গরু দেখতে এসেছেন ব্যবসায়ী হাজী মোমেন। তিনি বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় আজ অনেক মানুষ হাটে দেখতে এসেছেন। তবে হাট পুরোপুরি জমবে আগামী মঙ্গল ও বুধবার।
দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে পশ্চিম রামপুরা থেকে আফতাবনগরে কোরবানির পশু দেখতে এসেছেন মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, হাট আজকে মোটামুটি জমে ওঠেছে। তবে গরুর দাম এখনও বেশি। আরও গরু এলে শেষ দিকে দাম কমতে পারে। তাই আজকে শুধু পরিবারসহ দেখতে এসেছি।
এই হাটটি এক কোটি ৬১ লাখ টাকায় সিটি করপোরেশন থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা নিয়েছেন এম এ মান্নান। তবে এক আইনজীবীর রিটের প্রেক্ষিতে হাট বসানোর কাজে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। পরে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে গত ১৪ জুন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগ। তারপর থেকে শুরু হয় হাট বসানোর প্রস্তুতি। কিছুটা বিলম্বে শুরু করলেও এরই মধ্যে প্রস্তুতির কাজ শেষ করেছে হাট কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে ইজারাদার এম এ মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হাটটি টেন্ডারের মাধ্যমে পাওয়ার পর এক ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। পরে আমরা সুপ্রিম কোর্টে আপিল করলে আদালত হাইকোর্টের আদেশটি খারিজ করে দেন। এতে আমাদের প্রস্তুতি শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি।
তিনি আরও বলেন, হাটে নিরাপত্তার জন্য ১৫০টি ক্লোজ সার্কিট সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। সেগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। পাশাপাশি আমাদের তিন হাজার স্বেচ্ছাসেবক হাটে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া ডিবি, এসবি, র্যাব এই হাটে থাকবে। বেপারীদের জন্য সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরু রাখার পর্যাপ্ত জায়গা আছে।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাত পর্যন্ত হাটে চার হাজার পশু এসেছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আরও পশু আসবে। আশা করি এবার ২০ হাজার গরু বিক্রি হবে। হাটে ১২টি হাসিল ঘর আছে। প্রতিটি হাসিল ঘরে জাল টাকা পরীক্ষার জন্য দুইটি করে মেশিন রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি বুথ রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
এসসি/এসআইএ