মানিকগঞ্জ: দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষ ও যানবাহন পদ্মা-যমুনা নদী নির্বিঘ্নে পারাপারের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আরিচা ও পাটুরিয়াঘাট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পোশাক ও সাদা পোশাকে থাকবে নিয়োজিত এবং পাশাপাশি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে একাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ও ঘাট এলাকায় ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রার লক্ষ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন বেশ কিছু ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছে। ঈদের আগের ৩ দিন ও পরের ৩ দিন সাধারণ পণ্য বোঝাই সব ট্রাক পারাপার বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিত ও পচনশীল পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলো পারাপার হবে।
অন্যদিকে, দৌলতদিয়াঘাট থেকে গরু বোঝাই ট্রাকগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হয়ে পাটুরিয়াঘাট এলাকায় আসবে।
জানা গেছে, ঈদ যাত্রায় পাটুরিয়া-ফেরিঘাটের ৫টি পন্টুনের ১০টি পকেট দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন লোড-আনলোড হবে। ব্যক্তিগত গাড়ি ( ছোটগাড়ি ) ৫ নম্বর পন্টুন দিয়ে সরাসরি পার হবে এবং বাকি পন্টুনগুলো দিয়ে যাত্রীবাহী যানবাহন ও মোটরসাইকেল পারাপার হবে।
এবারের ঈদে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ১৮টি এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ৪টি ফেরি চলাচল করবে। একই ব্যবস্থাপনায় আরিচা ঘাটেও প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কর্তৃপক্ষ। উভয়ঘাটে পারাপারের জন্য ৩৩টি লঞ্চ ও শতাধিক স্পিডবোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ফেরি চলাচলে ছোটখাটো ত্রুটি হলে, মেরামতের জন্য পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় প্রস্তুত রয়েছে ভাসমান কারখানা (মধুমতি)। এছাড়া ঘাট এলাকা ও মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা রোধে জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ সমন্বয় করে কাজ করবে।
অপরদিকে, জানমাল ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যের পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও আনসার সদস্যরা মাঠে থাকবে। জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের পরিচালনার জন্য টিম থাকবে।
আরিচা পাটুরিয়া লঞ্চ মালিক সমিতির ম্যানেজার পান্না লাল নন্দী বলেন, ঈদযাত্রার জন্য আমরা এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন নদীতে পানি বেড়েছে আর এ কারণে আমরা প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করছি। যে লঞ্চে যতটুকু যাত্রী ধারণ ক্ষমতা আছে, সেটি সেই পরিমাণ যাত্রী নিয়ে নদীপথ পার হতে পারে সে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে মোট ৩৩টি লঞ্চ চলাচল করবে।
বিআইডব্লিউটিসি’র ডিজিএম শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, ঈদযাত্রার মানুষ ও যানবাহন পারাপার যাতে নির্বিঘ্নে করতে পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। আমাদের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে পর্যাপ্ত ফেরি রয়েছে। কোনো ভোগান্তি ছাড়াই নদীপথ পারাপার হওয়া যাবে। এছাড়া গরু বোঝাই ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নৌপথ পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুখেন্দু বসু বলেন, মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা রোধে জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি আমরা। তবে এবছর আমাদের পক্ষ থেকে ভিন্ন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, মোবাইল ওয়ার্কশপ। ঈদের সময় মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়, সেই ভোগান্তি লাগবে সড়কে থাকবে মোবাইল ওয়ার্কশপ। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার কালামপুর থেকে বারাবারিয়া একটি টিম এবং জেলার শুরু থেকে বাকি অংশটুকুতে আরেকটি টিম কাজ করবে।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম আজাদ খান বলেন, মহাসড়কসহ ঘাট এলাকার নিরাপত্তা ও যানবাহন সুশৃঙ্খল রাখতে সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। ঈদযাত্রায় যেকোনো অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে সব ধরনের প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে জেলা পুলিশ।
এদিকে, যাত্রী হয়রানি বন্ধে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিম থাকবে এবং কোনো অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল লতিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২৩
এসআরএস