বরিশাল: বুধবার (২৮ জুন) রাতটি পার হলেই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই শেষ সময়ে জমে উঠেছে বরিশালের বিভিন্ন স্থানের পশুর হাটগুলো।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ২০২২ সালের চেয়ে এ বছর গরু-খাসির দাম অনেক বেশি। বিক্রেতারা বলেছেন, অন্যান্য বিভিন্ন সময়ের চেয়ে এ বছর পশুর খাবার থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছুরই দাম বেশি, তাই কোরবানির পশুর দামও চড়া। ক্রেতারা এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে বেড়ালেও বাজেটের মধ্যে পাচ্ছেন না কোরবানির পশু।
হাটের ইজারাদাররা বলছে, এবারে বড় আকারের থেকে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। আর হাটগুলোয় মাঝারি আকারের বেশিরভাগ আমদানি ঘটেছে আশপাশের এলাকা থেকে। গরুগুলো গৃহস্থালি পর্যায়ে লালন-পালন হয়, যে কারণে এসবেই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।
মঙ্গলবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় নগরের বিসিক বটতলা এলাকা ও সদর উপজেলার কাকাসুরা পশুর হাট ঘুরে প্রচুর কোরবানির পশু দেখা গেছে। এসব হাটেও ক্রেতার কমতি নেই। কিন্তু পশুর দাম নিয়ে তারা হতাশ।
নগরের দক্ষিণ আলেকান্দার বাসিন্দা রিসাত জানান, গতবারের থেকে এবারে গরুর দাম অনেক বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে মাঝারি আকারের থেকে বড় গরুর দাম কিছুটা কম। রানা মৃধা নামে অপর ক্রেতা জানান, সকাল থেকে বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই, ঝালকাঠি সদরের সুগন্ধিয়াসহ বিভিন্ন হাটে গিয়েছেন। কিন্তু বাজেট অনুযায়ী গরু পাননি।
রানা বলেন, হাটে প্রচুর গরু আছে। কিন্তু দামে মিলছে না। যারা ভাগে কোরবানি দেন তারা গরু কিনতে পারলেও আমরা যারা এককভাবে দিই, তারা অসুবিধায় পড়ছি। ৬০ হাজার টাকার নিচে ভালো গরু পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের একদিন বাকি থাকায় বিক্রেতারাও দাম ছাড়তে চাচ্ছেন না।
কাকাসুরা হাটে দুটি গরু এনেছিলেন লিটন। একটি ৮৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। অপরটি নিয়ে বসে আছেন; বিক্রি করবেন অন্তত ৬৮ হাজারে। নিজ বাড়িতে রেখে গরুগুলো পালন করেছেন তিনি। কোনো ভেজাল খাওয়াননি। বাজারে প্রচুর দেশি গরু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যারা বুধবারের জন্য অপেক্ষা করছেন, তাদের আরও বেশি দামে গরু কিনতে হতে পারে।
এ হাটের ছাগল বিক্রেতা সেলিম বলেন, আমরা যে দরে বিক্রি করতে চাচ্ছি, সেই দরের ক্রেতারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আমি তিনটি ছাগল এনেছি, কোনোটি যদি ১৮ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করি, ক্ষতি ছাড়া কিছু হবে না। খাদ্যের দাম বাড়ায় পশু পালনে খরচ বেড়েছে। তাই পশুর দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
হাটগুলোর পাশাপাশি খামারগুলোয় দেশির পাশাপাশি দেখা মিলছে শাহিওয়াল, দেশাল, আরসিসি, নেপাল, ফিজিয়ান, অস্টেলিয়ান ,পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের গরু। খামারগুলোয় লাইভওয়েট মেশিনে মাপের মাধ্যমে কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এ পদ্ধতির কারণে গত বছরের তুলনায় গরুর কেজি প্রতি দাম বাড়ানো হয়েছে ১০০ টাকা। খামারিরা জানান, এবার ভারতীয় গরু না আসায় কোরবানির হাট স্থানীয় গরুর দখলে আছে।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মো. নূরে আলম বলেন, বরিশাল বিভাগে এ বছর পশুর চাহিদা রয়েছে ৪ লাখ। সেখানে বিভাগের ২৩ হাজার খামারি লালন-পালন করেছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ পশু। একটা সময় বিভাগের হাটগুলো ভারতীয় গরুর দখলে ছিল। এখন স্থানীয় গরু দখল করে নিয়েছে। এতে লাভবান হচ্ছে খামারিরা। আর হাটগুলোয় কোরবানিযোগ্য পশুর সুস্থতা পরীক্ষা করতে মাঠে আছে দেড় শতাধিক ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২৩
এমএস/এমজে