ঢাকা, শনিবার, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমাদের বাবা নেই, ঈদও নেই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
‘আমাদের বাবা নেই, ঈদও নেই’ সাংবাদিক নাদিমের সন্তানরা

জামালপুর থেকে: বাবা ছাড়া ঈদ যে কত কষ্টের, তা শুধু হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারে বাবাহারা সন্তানরাই। এবারের ঈদুল আজহায় সেই কষ্টের সাগরে ভাসছে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের পরিবার।

বাবাকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ঈদ করছে নাদিমের সন্তানরা।

‘প্রতিবার ঈদে বাবা আমাদের জন্য কাপড়সহ নানা জিনিসপত্র কিনে আনতো। বাবা যা কিনতো আমার দুই ভাইয়ের তাই পছন্দ হতো। কিন্তু আমার নানা অভিযোগ থাকতো সেই কেনা কাটায়। পরে বাবা আমাকে নিয়ে বাজারে ছেড়ে দিতো আর বলতো তোমার যা ইচ্ছা কেনো আমি আছি। ’ 

ঈদুল আজহার দিন বিকেলে এভাবেই বাবা না থাকার কষ্টের কথা বাংলানিউজের কাছে বলেছেন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত।

সাংবাদিক নাদিমের পরিবার 

তিনি বলেন, আমাদের জীবনে ঈদ নেই, কারণ আমাদের বাবা নেই। এই ঈদে বাবার কাছে কত আবদার করতাম৷ বাবা অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতো। শুধু ঈদ না ওরা (হত্যাকারীরা) আমাদের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে। ঈদের আগে আমাদের বাসা থাকত উৎসবমুখর। এইবার আমাদের আব্বুও নাই, ঈদও নাই। মার্কেটে গিয়ে বলতেন, সবচেয়ে দামি জামা বের করো আমার মেয়ের জন্য। এখন কেউ বলবে না। কেউ ঈদের আগেরদিন জিজ্ঞেস করবেনা; আর কি কি বাকি আছে, চলো কিনে নিয়ে আসি।

বাসার বিছানার ওপর নাদিমের ছবি নিয়ে বসে আছে পরিবারের সব চেয়ে ছোট ছেলে রিশাদ আব্দুল্লাহ। সে শুধু বলছে, বাবা তুমি আসো আমরা ঘুরতে যাবো। সবাই ঘুরতে যাইতেছে আমাদেরও নিয়ে যাও।

সাংবাদিক রাব্বানীর ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন রিফাত বলেন, গতবার ঈদে বাবার সঙ্গে গরু কিনেছি, কোরবানি করেছি। ঈদের জামা-কাপড় কিনেছি। কিন্তু এবার ঈদে বাবা নেই। আমরা কিছুই করতে পারছি না। কোনো নতুন জামা-কাপড় কিছুই কিনতে পারছি না। আমরা অসহায়। আমাদের কোনো ঈদ নেই।

আর শোকে কাতর নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম শুধু বলছেন, ঈদ তো শেষ হয়েছে চির জীবনের জন্য। ঈদ নিয়ে আর কোনো ভাবনা নেই আমার জীবনে। এখন শুধু আল্লাহর কাছে একটিই আবেদন আমার স্বামীর হত্যার সুষ্ঠু বিচার। এটিই যেন পাই।  

গত ১৪ জুন রাতে বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জের পাথাটিয়ায় পৌঁছালে বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান বাবুর নেতৃত্বে ১০-১২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সাংবাদিক নাদিমকে পিটিয়ে জখম করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। রাত ১২টায় সেখান থেকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন বিকেল পৌনে ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের বাড়ি বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামে। নাদিম তার পেশাগত কারণে বকশীগঞ্জ বাজারের গরুহাটি এলাকার নিজের বাসায় থাকতো।  

গত ২৩ জুন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আসামি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান বাবু। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।

সাংবাদিক নাদিমের ছোট ছেলে  রিশাদ আব্দুল্লাহ

এর আগে নিহত সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) মাহমুদুল আলম বাবুকে প্রধান আসামি করে ২২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, ২৯ জুন , ২০২৩
এসএফ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।