নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়ায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক কারবার নিয়ে ফের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ঘটেছে। এতে একজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার (৩ জুলাই) রাতে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে হৃদয় হাসান নামে গুলিবিদ্ধ এক যুবককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গুলিবিদ্ধ হৃদয় হাসান (২২) চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি চনপাড়ার একটি খাবার হোটেলের মালিক।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চনপাড়ার শীর্ষ মাদককারবারি ও ইউপি সদস্য বজলুর মারা যাওয়ায় গত ১২ জুন এখানে উপ নির্বাচন হয়। এরপর থেকে চনপাড়ার আধিপত্য বিস্তার ও মাদককারবারের দখল নিয়ে কয়েকদিন পরপর চনপাড়ার চিহ্নিত মাদক কারবারি জয়নাল ও শমসের সাহাবুদ্দিন লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এ জেরেই গত দিনদিন ধরে সেখানে থেমে থেমে মারামারি হয়।
সোমবার রাতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এসময় খাবার হোটেল বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন হৃদয়। পরে তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সংঘর্ষে আহত হয় উভয় পক্ষের আরও অনন্ত ৯ জন। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রূপগঞ্জ থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলার বিষফোড়া কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন। চনপাড়ায় মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, নারী ব্যবসা, ভাড়াটের খুনিদের আতুরঘরসহ সব অপরাধ সংঘটিত হয়। চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র একসময় আলোচিত ইউপি সদস্য বজলুর রহমান বজলুর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তখন বজলুর নেতৃত্বেই চলতো চনপাড়ার সব অপকর্ম। বজলু ছিল চনপাড়ার অঘষোতি গডফাদার। ইতোমধ্যে চনপাড়ায় ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার কুট্টি ও তার স্বামী হাসান মুহুরী, আনোয়ার মাঝি, সিটি শাহীনসহ কয়েকটি আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের ১৮ নভেম্বর বজলু র্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়। পরে চলতি বছরের গত ৩১ মার্চ বজলু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। বজলু মারা যাওয়ার পর থেকে চনপাড়া নতুন গডফাদার হতে উঠে পড়ে বেশকয়েকজন। এদের মধ্যে অন্যতম জয়নাল গ্রুপ, শাহাবুদ্দিন গ্রুপ, শমসের গ্রুপ, ইয়াছমিন গ্রুপ, রায়হান গ্রুপসহ বেশকয়েকটি গ্রুপ। আর চনপাড়ার আধিপত্য নিতে এরই মাঝে হাফ ডজন সংঘর্ষ, হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরের গত ১২ এপ্রিল বজলুর সাম্রাজ্য দখলে নিতে জয়নাল গ্রুপের সঙ্গে শমসের গ্রুপ ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়। গত ২৯ মার্চ চনপাড়ার আধিপত্য নিজেদের দখলে নিতে শমসের ও শাহাবুদ্দিনের গ্রুপের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষ জসীম গাজী, ওসমান গণি, স্বপ্না বেগম ও রাঙ্গাসহ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর তালাবদ্ধ করে দেয়।
গত ১৯ ও ২০ মে দুইদিন ব্যাপী চনপাড়ায় আধিপত্য নিতে ফের প্রকাশ্য দিবালোকে শাওন গ্রুপ ও জয়নাল গ্রুপ, রায়হান, শমসের ও শাহাবুদ্দিন গ্রুপ, ইয়াছমিন গ্রুপের মধ্যে গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সৈয়দ নামে এক দিনমজুর গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় আহত হয় অন্তত ৩০ জন।
৩০ এপ্রিল রাতভর আবারো সংঘর্ষে জড়ায় মাদক কারবারিরা। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চনপাড়ায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এসময় দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনা রূপগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। পুনরায় ১০ মে মাদক কারবারিরা সংঘর্ষে জড়ায়। পরে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে ধারালো অস্ত্রসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে।
জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবির হোসেন জানান, গত দুইদিন ধরে চনপাড়া উত্তপ্ত ছিল। রাতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হৃদয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা চনপাড়ার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এর আগে, শেষ ২৩ জুন দুপুরে একই কারণে সব চনপাড়ার অফিস ঘাট এলাকায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে বাবলু মিয়া ও মো. মাসুম নামে দুইজন গুলিবিদ্ধ হন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২৩
এমআরপি/