ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন চাই’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০২৩
‘বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন চাই’ বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাব: আমাদের করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন ও বিধিমালা চাই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, আমাদের বড় বড় শহর, সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকাসহ পুরো দেশের জন্য আমরা বৃক্ষ সংরক্ষণের মাস্টার প্ল্যান আমরা চাইতে পারি না কেন? আমরা ভারতের মতো একটি বিস্তারিত পদ্ধতি অবলম্বন করে গাছ কাটতে হবে, এমন আইন বা বিধিমালা চাইতে পারি না কেন? আমি তো নীতি একদমই চাই না।

যেখানে নীতিতে কোনো কিছুই চলে না, সেখানে একটি কাগজের ওপর সিল দিলে, সেটি দেশের নীতি কখনো হয়ে যায় না। আইন থাকলে আপনার আমার হাতে একটি শক্তি থাকে, যেটা নিয়ে আমরা সরকারকে বলতে পারি, আপনি আপনার নিজের আইন পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কাজেই বৃক্ষ সংরক্ষণের জন্য আমি একটি আইন ও মাস্টার প্ল্যানের দাবি করি।

শনিবার (৮ জুলাই) ‘বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশে বন আইন, ১৯৮৭ আছে। সরকার ২০১৬ সালে গাছ কাটা যাবে না, কাটলে পদ্ধতি অনুসরণের একটি খসড়া প্রস্তুত করে। সেই আইন মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়ে যখন সংসদে গেছে, তখন সংসদ থেকে বলা হলো, এমন কোনো আইন আলাদা করে প্রয়োজন নেই। বরং বিদ্যমান বন আইনের অধীনে বিধিমালা করে এটা করা সম্ভব বলা হলো। আমাদের কথা হলো, যেভাবেই করা সম্ভব হোক না কেন সেটা করেন। আর বসে থাকবেন না।

তিনি বলেন, আমার আপনার টাকা দিয়েই সরকারি প্রকল্পগুলো হয়, তাহলে আমাদের কাছে কেনো নূন্যতম জবাবদিহিতা থাকবে না। ওই প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা যদি আমাদের দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তো ভালো উপদেশও তাদের দিতে পারি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পরিকল্পনাবিদ আছেন। কিন্তু তিনি কি কর্তাব্যক্তির ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারবেন?

রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, আইইউসিএল বলে একটি সংস্থা আছে। তারা ৩৯৪টি প্রজাতির উপর গবেষণা করে দেখেছে, পাঁচটি বৃক্ষ প্রজাতি দেশে বিলুপ্তপ্রায়। ১২৭টি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। ২৬২টি প্রজাতি সংকটাপন্ন। তাহলে আমাদের ৩৯৪টি প্রজাতির মধ্যে সবকটিই প্রায় হারিয়ে যাওয়ার রাস্তায় রওনা হয়েছে। তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাব? কতগুলো ফ্লাইওভার? কতগুলো রাস্তা? তা তো হতে পারে না। উন্নয়নের কোনো অভিধানে বলা নেই এত জনগণের জন্য এত রাস্তা লাগবে। বরং বলা আছে এত জনগণের জন্য এত গাছ লাগবে, জলাশয় লাগবে।

তিনি বলেন, নগরে আমাদের এমন গাছ লাগাতে হবে, যেগুলো ছায়া দেবে, তাপ কমাবে, দূষণ কমবে, একইসঙ্গে পাখিরও বাসস্থান হবে। পাখি আমরা গাছে দেখব। পাখি কাটাবনে গিয়ে দেখার জিনিস না।

সংবাদ সম্মেলনে ‘বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। মূল প্রবন্ধে তিনি সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বৃক্ষ নিধনের নানা চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি বৃক্ষ নিধনের কারণে পরিবেশগত যেসব প্রভাব পড়ছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।

ইকবাল হাবিব বলেন, বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, কার্বন শোষণ হ্রাস পেয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিট আইল্যান্ড এফেক্ট পড়ছে, বায়ু দূষণ হচ্ছে।

এ সময় তিনি বৃক্ষ অব্যবস্থাপনার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেন। পাশাপাশি বৃক্ষ নিধন বন্ধে ১২ দফা দাবি জানান।

বাপার কোষাধক্ষ্য মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালণায় সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাত মসজিদ সড়ক গাছ আন্দোলনের শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. তাওহীদা রশীদ, গ্রিন সেভার্স-এর প্রধান নির্বাহী আহসান রনি প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০২৩
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।