ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

তিস্তার বাম তীরে বন্যা, পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
তিস্তার বাম তীরে বন্যা, পানিবন্দি কয়েক হাজার পরিবার

লালমনিরহাট: বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের কয়েক হাজার পরিবার।

ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি এসব পরিবারের সদস্যরা।

গবাদি পশু-পাখি আর মৎস্য খামারিরাও চরম বিপাকে পড়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৩৪ মিটার। যা (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫মিটার) বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর ৩ ঘণ্টা পরে মাত্র ৬ সেন্টিমিটার পানি কমে দুপুর ১২টায় রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৮ মিটার। পুনরায় ৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিকেল ৩টায় রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৩২ মিটার।

ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েক দিনের থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের লালমনিরহাট অংশের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা সকাল ৯টা পর্যন্ত অপরিবর্তিত থাকে। দুপুর ১২টায় কিছুটা কমে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৮ মিটার। যা বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপরে। বুধবার রাত থেকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা তীরবর্তী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সব কয়টি উপজেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। পানি যত বাড়ছে নদী পাড়ের মানুষের আতঙ্ক ততই বাড়ছে। চরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ের অধিকাংশ পরিবারের সুপেয় পানির টিউবয়েল পানির নিচে ডুবে গেছে। পায়খানা ডুবে যাওয়ায় পুরুষরা বাহিরে যেতে পারলেও নারীরা প্রস্রাব পায়খানায় ব্যাপারে চরম বিপাকে পড়েছেন।

মাচাং বানিয়ে তাতে রান্না করছেন নারীরা। এক বেলা রান্না করে চালিয়ে নিচ্ছেন ২/৩ বেলা। মাচাংয়ের ওপর পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিস্তা পাড়ের পানিবন্দি পরিবারগুলো। বন্যার কারণে এসব এলাকায় সাপসহ পোকা-মাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে কয়েকগুন। ফলে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এসব পরিবার।

মাচাংয়ের ওপর চুলা বসিয়ে দিন রাতের রান্না এক সঙ্গে করছেন গোবর্দ্ধন স্প্যার বাঁধ এলাকার গৃহবধূ দৌলতন নেছা (৫০) বলেন, বন্যা হলে কষ্ট বাড়ে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মাচাংয়ে রান্না করতে হয়। পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে নানান রোগ হয়। তবুও বাঁচতে হলে খাইতে হবে। দিন ও রাতের খাবার একবারে রান্না করতেছি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এখন পর্যন্ত পাইনি। তাই ওই পানিই খাইতে হচ্ছে যোগ করেন দৌলতন নেছা।

একই এলাকার মহুবার রহমান বলেন, রাত থেকে পানি বাড়ছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানার নিচে পানি। মাচাং বানিয়ে কোনো রকম রান্না করা হচ্ছে। গবাদি পশুপাখি আর শিশু বৃদ্ধদের নিয়ে উঁচু স্থানে এসেছি। রাত হলে আবার মাচাংয়ের ওপরে বসে বসে রাত কাটাতে হবে। সাপের ভয়ে আর ছোট বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।

মহিষখোচা এলাকার মানজেদুল ইসলাম জানান, নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ রক্ষায় চারদিকে নেট জাল দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছি। তবে পানি আরও বাড়লে কয়েক লাখ টাকার মাছ ভেসে যাবে। পুকুরের মাছ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ মৎস্য চাষি।

হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম‌্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ‌্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম‌্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ‌্য পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্রমে বাড়ছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তারা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা বাংলানিউজকে বলেন, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা এবং সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টায় মাত্র ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা কয়েক ঘণ্টা বিপৎসীমার ওপরে থাকায় তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যা বলেন, তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে সকালে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। জরুরি প্রয়োজনসহ যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে। আমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মাধ্যমে সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৩
আরএ/আরএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।