দিনাজপুর: দিনাজপুরে পুনর্ভবা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বালু ভরাট ও জলাবদ্ধতার কারণে সীমাহীন দুর্ভোগের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে শহরের কাঞ্চন ব্রিজের ওপরে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নতুনপাড়া এলাকাবাসী।
পরে প্যানেল মেয়র ও পুলিশ প্রশাসনের আশ্বাসে প্রায় তিন ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, আগে আমাদের এই জায়গায় একটা ড্রেন ছিল। এই ড্রেন দিয়ে এখানকার প্রায় ১ লাখ বাসিন্দাদের পানি গিয়ে নদীতে পড়ত। হঠাৎ করে এখানে বালু ফেলা শুরু করলে এখান দিয়ে পানি যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এত আমাদের সবার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর আগেও মেম্বার আসছে, চেয়ারম্যান আসছে কিন্তু কোনো কাজের কাজ হয়নি। এই জমির মালিক এখানে বালু ফেলছে। আমরা চাই আমাদের ড্রেনেজ ব্যবস্থা আবার আগের মত সচল থাকুক।
লাইলি বেগম নামে স্থানীয় একজন বলেন, রাতে তো বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার ছেলের জ্বর আর মাথা ব্যথা। আমি তাকে নিয়ে বসেই ছিলাম। পরে দেখি আমাদের ঘরে পানি ঢুকছে। এখন আমার ছেলেকে নিয়ে কি করব আর ঘরের মালপত্র নিয়ে কি করব বুঝতেছিলাম না। অল্প একটু পানি হলেই ঘরে পানি উঠে যায়। ২০১৭ সালের বন্যার মত ঘরে পানি উঠে। ড্রেনের পানি ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে গেলে তো আর এরকম হয় না। ময়লা পানিতে মালপত্রগুলো ডুবে গিয়েছিল এগুলো এখন আবার পানি গরম করে পরিষ্কার করতে হবে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কাশেম হাজী আর চঞ্চল এখানে বালু ফেলেছেন। তারা তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা ছাড়াও পৌরসভার অংশেও বালু ফেলছেন। তাই পানি বের হতে না পারায় এখানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিরল উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আগে এখানে ড্রেনের মত করে পানি যেত। জমির মালিক এখানে বালু ফেলছে তখন বালুগুলো ড্রেনে চলে আসছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী অনেকবার পৌরসভায় আসছিল এই সমস্যার জন্য। পৌর কর্তৃপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিলে সমাধান হয়ে যেত।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, আগামীকাল শনিবার (১৫ জুলাই) এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল করতে দুটি ভ্যাকু মেশিন কাজ করবে। পৌরসভা থেকে এখানে ড্রেনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আগামী বরাদ্দে এটির কাজ শুরু হবে। তবে স্থানীয় লোকজন অনেকবার বিষয়টি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সমাধান করতে পারেননি। এটা পৌরসভার ব্যর্থতা।
দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ জিন্নাহ আল মামুন বলেন, পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা হঠাৎপাড়া একটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংকীর্ণ। নদী থেকে উত্তোলনকৃত বালু এখানে রাখায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির পানি জমে তাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হতো। অনেকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও তারা কোনো সুফল পাননি। তাই আজকে তারা রাস্তায় নেমেছে। আমরা ঘটনা জানার পরই এখানে আসি। প্যানেল মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা শনিবার থেকে দুটি ভ্যাকু মেশিন দিয়ে পানি বের করার প্রক্রিয়া শুরু করবেন। এই আশ্বাসে এলাকাবাসী আজকের মত তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০২৩
এসএম