ঢাকা: ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের ইচ্ছা এবং দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানে স্থান পেয়েছিল। বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে এটিকে বাতিল করে দেশে চরম সংকট তৈরি করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং বিদ্যমান সংকট উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ অভিমত প্রকাশ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে এ সেমিনারের আয়োজন করে পলিসি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটি।
পলিসি ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ সোসাইটির চেয়ারম্যান এবং সাবেক সচিব মো. ইসমাইল জবিউল্লাহর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক যুগ্ম সচিব বিজন কান্তি সরকার।
অবসরপ্রাপ্ত কর কমিশনার কাজী ইমদাদুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং আইন অনুষদের প্রাক্তন ডিন ড. বোরহান উদ্দিন খান।
এছাড়া আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের সাবেক ইন্সেপেক্টর জেনারেল মো. আব্দুল কাইয়ুম, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার জেনারেল ইকতেদার আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিজন কান্তি সরকার বলেন, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক একটি বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের আদেশ প্রদান করে জাতিকে মহাসংকটে নিপতিত করেছেন।
বিচারপতি খায়রুল হক বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা জনগণের ইচ্ছা এবং দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্যের ফসল হিসেবেই সংবিধানে স্থান পেয়েছিল।
তিনি বলেন, বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধন আইন অবৈধ ঘোষণা এবং রায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেশে চরম রাজনৈতিক সংকট তৈরি করা হয়েছে। দেশকে এ গভীর সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা, গণতন্ত্রে ফিরে আসা, প্রকৃত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা নিশ্চিত করা। আর এটা সম্ভব একটি ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করার মাধ্যমে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ছিল ১৯৯৬ সালে জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রচিত একটি রাজনৈতিক সমঝোতার ফসল। দেশের সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা-দাবি-আন্দোলন এবং সর্বোপরি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনই হচ্ছে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা।
বক্তারা আরও বলেন, দলীয় সরকারের অধীন এদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ইতিহাস মোটেই সুখকর নয়। কারণ দেখা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে দলীয় সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা কখনও পরাজিত হয়নি। অন্যদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন অনুষ্ঠিত ৯১, ৯৬ ও ২০০১ এর তিনটি নির্বাচন দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছে।
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতি সমন্বয়ে গঠিত একটি ত্রয়োদশ সংশোধন আইন তথা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ মর্মে ঘোষণা করেন। সুপ্রিম কোর্টে আপিলের শুনানিতেও আটজন অ্যামিকাস কিউরির মধ্যে সাতজনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন মর্মে কোনো না কোনোভাবে অভিমত প্রকাশ করেন।
তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল ও তার সহযোগীরাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন মর্মে আদালতে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক এসব অভিমত, যুক্তি, ব্যাখ্যা, পরামর্শ, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা কোনো কিছুই আমলে না নিয়ে একটি বিতর্কিত রায় দিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে নিষ্পত্তিকৃত রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে রাতারাতি ওলট-পালট করে দেন। এতে দেশ মহাসংকটে নিমজ্জিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
এসসি/এএটি