ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সৌদি আরবে অগ্নিকাণ্ড

দেশে ফিরে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন নাটোরের ওবায়দুল

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
দেশে ফিরে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন নাটোরের ওবায়দুল

নাটোর: সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৯ সালে সৌদি আরবে পাড়ি জমিয়েছিলেন নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের ওবাইদুল হক (৩৩)। সেখানে দাম্মাম শহরের হুফুফ সানাইয়া এলাকায় একটি ফার্নিচার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন তিনি।

টানা ৪ বছর পরিশ্রমের টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছেন। আর মাত্র ৪ মাস পর দেশে ফিরে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ওবায়দুল হক। কিন্তু সেই ইচ্ছাটুকু পূরণ হলো না তার।

শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে নিজ কর্মস্থল সোফা কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারান তিনি। দুপুরে জুমার নামাজে যাওয়ার আগে ভিডিও কলে কথা বলেন মায়ের সঙ্গে। নামাজ শেষে দুপুরে কি খাবেন তা বলেছিলেন মায়ের কাছে। আর সন্ধ্যার দিকে মায়ের কাছে আসে ছেলের মৃত্যুর খবর। মুহূর্তের মধ্যে পরিবারে শুরু হয় শোকের মাতম। ছেলে হারানো মা রাহেলা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। স্বজনদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।  

এদিকে নিহত ওবায়দুলের ১০ ভাই-বোন টাকা খরচ হওয়ার ভয়ে কেউ তার মরদেহ দেশে আনতে চান না। তারা চান সৌদি আরবেই তার মরদেহ দাফন হোক।

শনিবার (১৫ জুলাই) দুপুরে উপজেলার খাজুরা ইউনিয়নের চাঁদপুর এলাকায় নিহত ওবায়দুলের বাড়িতে শোকের মাতম বিরাজ করতে দেখা যায়। মা রাহেলা বেগম তার ছেলের ছবি বুকে আগলে রেখে বিলাপ করছেন। পাশে বসা বড় ভাই মজনু রহমান আর বোন নার্গিস। তারা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না আদরের ভাই আর পৃথিবীতে নেই।

ওবায়দুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে আত্মীয়-স্বজনসহ আশপাশের মানুষজন তাদের বাড়িতে ভিড় জমাতে থাকে। পুরো চাঁদপুর গ্রাম জুড়ে বিরাজ করে শোকের মাতম। ওবায়দুল হক উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের মৃত দবির উদ্দিনের ছেলে।

নিহত ওবায়দুলের বড় ভাই মজনু রহমান বাংলানিউজকে জানান, এইচএসসি পাশ ওবায়দুল হক ৭ ভাই আর ৪ বোনের মধ্যে সবার ছোট। এজন্য সবাই তাকে আদর করতো। পরিবারে অনেক সদস্য হওয়ায় তাদের সংসারের অবস্থা খানিকটা নাজুক ছিল। তাই সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ২০১৯ সালে ধার-দেনা করে তাকে সৌদি আরব পাঠানো হয়। টানা ৪ বছর টাকা পাঠিয়েছে, ধার-দেনা সবে মাত্র পরিশোধ হয়েছে। আর মাত্র ৪ মাস পর দেশে ফিরে বিয়ে করার কথা ছিল। এজন্য মেয়ে দেখাশুনার কাজও চলছিল। কিন্তু সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। সৌদি আরবের দাম্মাম শহরের যে কারখানায় কাজ করতো, সেখানেই পুড়ে অঙ্গার হলো ওবায়দুল। নিভে গেল ওবায়দুলের জীবনপ্রদীপ।

তিনি বলেন, দাম্মামের আরেকটি কারখানায় কর্মরত মামাতো ভাই ইয়াদুল ফোন করে তাদের জানায় ওবায়দুলের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও মৃত্যুর কথা।

ছেলের শোকে বাকরুদ্ধ মা রাহেলা বেগম বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে পবিত্র দেশে। আমি চাই তাকে সেখানেই সমাহিত করা হোক। ছেলে জীবিত থাকতে একাধিকবার বলেছে দেশটা এতো সুন্দর ও পবিত্র তাই সে সেখানেই থাকতে চায়।

খাজুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ওবায়দুলের পরিবার জানিয়েছে তারা চান ছেলের মরদেহ সৌদি আরবেই সমাহিত করা হোক।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোজিনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ওবায়দুলের মৃত্যু দুঃখজনক। তার মরদেহ দেশে আনার জন্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে হবে। এরই অংশ হিসেবে একটি ফর্ম পাঠানো হয়েছে পরিবারের সদস্যদের কাছে। সেটি হাতে পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে আমরা জেনেছি তার পরিবার চায় সৌদিতেই তাকে সমাহিত হোক। আমরা এ ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে শিগগিরই কথা বলে পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০২৩
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।