গাজীপুর: ভূমি মালিকদের ভূমি জটিলতা নিয়ে ভোগান্তির শেষ নেই। ভূমি জটিলতা নিরসনে বছরের পর বছর তারা ঘোরেন সরকারি অফিস, আদালতে।
গাজীপুরে এ সংকট বহুদিনের। এলাকাবাসীসহ ভুক্তভোগীরা জানান, হাজার হাজার মানুষ ভূমি (জমি) জটিলতা নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিস ও বিভিন্ন সরকারি অফিস আদালতে ঘোরেন। কারও ভোগান্তি মিস কেস, নামজারি-সীমানা নির্ধারণ নিয়ে। কেউ কেউ দলিলের নকল ও পর্চা সার্টিফাই কপি পেতেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভূমি মালিকরা রেকর্ড অফিস থেকে পর্চা সার্টিফাই কপি তুলতে গেলে অনেকের পর্চা ভলিউম ছেঁড়া থাকে। ওই পর্চা দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এতে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়েন ভূমি মালিকরা।
দলিলের সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করতেও ভোগান্তির শেষ নেই। কখনো কখনো ভলিউম খুঁজে পাওয়া যায় না, কখনো থাকে ছেড়া। নানা সমস্যার কারণে একটি দলিলের সার্টিফাই কপি সংগ্রহ করতে গেলেও মাসের পর মাস ঘুরতে হয় ভূমি মালিকদের।
মিস কেস ও সীমানা নির্ধারণ আবেদন করা মানেই ভোগান্তি মাথায় নেওয়া। একজন ভূমি মালিক বাদী হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিস কেস করেন। পরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) স্থানীয় ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে প্রতিবেদন দিতে বলেন। সেই মিস কেসের বাদী ও বিবাদীকে নোটিশ করে ভূমি অফিসে শুনানি করেন। সেখানেও বেশ কিছুদিন সময় কেটে যায়। ভূমি অফিস থেকে আবার সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়। সেখানে শুনানি চলতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই বিবাদীপক্ষ তাদের জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিয়ে শুনানির সময় বাড়ানোর আবেদন করেন বার বার। এভাবেই মিস কেস চলতে থাকে বছরের পর বছর; ভোগান্তিও বাড়ে সে সঙ্গে।
অন্যদিকে সরকার ভূমির গেজেট প্রকাশ করে। গেজেটে ‘ক’ তফসিল ভুক্ত ভূমি (জমি) নিয়ে মানুষের হয়রানি আর ভোগান্তি আদালত পর্যন্ত। কোনো ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের বরাবর আবেদন করে সীমানা নির্ধারণ; আবার কোনো ক্ষেত্রে আদালতে মামলা দায়ের করতে হয় ভূমি মালিকদের। ‘ক’ তফসিলভুক্ত ভূমি (জমি) সরকার নিজ উদ্যোগে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে চিহ্নিত করে নিলে হাজার হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হতো না। আর এসব জমি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করলেও কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ভূমির এসব জটিলতা নিয়ে বছরের পর বছর ভোগান্তির শিকলে বন্দি থাকে হাজার হাজার মানুষ।
ভূমি মালিকদের দাবি, স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে খসড়া পর্চা সংগ্রহ করে রেকর্ড অফিসের ভলিউম ছেঁড়া পর্চাগুলো সংশোধন করলে তারা ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতো। এছাড়া ‘ক’ গেজেট ভুক্ত জমি সরকার নিজ উদ্যোগে সীমানা নির্ধারণের মাধ্যমে চিহ্নিত করে নিলে মানুষের ভোগান্তি হতো না। পরে ওই জমি লিজ দিয়ে সরকার রাজস্ব পেতো। এছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে শুনানির মাধ্যমে মিস কেস শেষ করলে মানুষ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেতো। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ভূমির বিভিন্ন জটিলতা অল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করার দাবি গাজীপুরবাসীর।
বাবার ক্রয় ও মায়ের ওয়ারিশ সূত্রে জমির মালিক হন কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা বাদল মিয়া। পরে পৈত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে তিনি জমির মালিক। ২০১৯ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে তিনি ওই জমি নিয়ে মিস কেস করেন। প্রায় চার বছর ধরে তার মিস কেস চলমান। কিন্তু বিবাদী পক্ষ কোনো কাগজপত্র দাখিল না করে শুধু সময় বাড়ানোর আবেদন করে যাচ্ছে। এভাবে কয়েক বছর ধরে শুনানি চলছে। এতে বিভিন্নভাবে তার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে ভোগান্তি।
আব্দুল সামাদ নামে এক ব্যক্তি জানান, ১৯৭০ সালে তিনি সাফ কবলা দলিল মূলে জমি ক্রয় করেন। পরে ভোগ দখল এবং ১৯৮৯ সালে নামজারি করে ১৪২৮ সন পর্যন্ত কর (খাজনা) পরিশোধ করে আসছেন। সিএস, এসএ এবং আরএস রেকর্ডিয় মালিকদের কাছ থেকে কয়েকটি দাগ থেকে জমি ক্রয় করেন। কয়েকটি দাগ ও খতিয়ানে প্রায় ৩৬ বিঘা জমির কাতে ৭১ শতাংশ জমি ‘ক’ গেজেট ভুক্ত করা হয়। এ কারণে চলতি বছরে তিনি জমির কর (খাজনা) দিতে এবং জমি বিক্রি করতে পারছেন না। পরে ভূমি অফিস থেকে তাকে সীমানা নির্ধারণ করার পরামর্শ দেন। এতে তিনি ভোগান্তিতে পড়েন।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এস.এম সাইফুর রহমান বলেন, নতুন করে জমি লিজ দেওয়ার সুযোগ নেই। ভিপি সম্পত্তি নিয়ে সরকারের বিধিমালা তৈরি করছে। এই সম্পত্তিগুলো খাসে আনবে নাকি কোনোভাবে এগুলোর ব্যবস্থাপনা করবে, সেটার একটা নীতিমালা প্রস্তুত করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ক’ তফসিলভুক্ত যত সম্পত্তি আছে সরকারের পক্ষে ডিক্রি আসছে। অথবা কেউ মামলা করেনি এমন সম্পত্তি আমাদের দখলে নিয়ে নিষ্পত্তি করা হবে। সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের যতটুকু সম্পত্তি তা দখলে আছে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যক্তির সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। আমাদের সীমানা নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২৩
আরএস/এমজে