ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পাউবোর জমিতে দোতলা বাড়ি করার অভিযোগ!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
পাউবোর জমিতে দোতলা বাড়ি করার অভিযোগ!

ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর মৌজায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেরিবাঁধের জন্য সংরক্ষিত জমি কৃষিকাজের জন্য লিজ নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে চারতলা ফাউন্ডেশনের একটি দোতলা বিল্ডিং।

অবদা বেড়িবাঁধ সড়কের সঙ্গে এই বাড়িটি এমনভাবে করা হয়েছে যা সামনে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এর পেছনে দোতলা বিল্ডিং করা হয়েছে।

সামনের অংশে সড়কের পাশে সেমিপাকা টিনের বড় বড় চার-পাঁচটি দোকান ঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। দেখলে মনে হবে সেগুলো অস্থায়ী কোনো স্থাপনা।

সেই স্থানের সড়কের ঢাল দিয়ে বাঁ দিকে তাকালে চোখ ছানাবড়া হতে পারে অনেকেরই। সেখানে প্রায় ২০ মিটার লম্বা কংক্রিটের তৈরি ছাদের নিচে রীতিমতো একটি বাড়ি তৈরি করে ফেলা হয়েছে পাউবোর অগোচরেই। একটু একটু করে দখল নিতে নিতে পাউবোর ওই বেড়িবাঁধের জমির মালিকানাই এখন দাবি করে বসেছেন মো. জাকির হোসেন (৬২) নামে সৌদি আরব ফেরত প্রবাসী এক ব্যক্তি। সেই সূত্রে তৈরি করেছেন এই ভবন।

সাংবাদিকদের কাছে পাউবোর বেড়িবাঁধের ওপর তৈরি বিল্ডিং তার নয় বলে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও পরে তিনি বলেন, পাউবোর ওই সংরক্ষিত জমি মালিকানা সূত্রে তার ক্রয় করা সম্পত্তি।

তবে পাউবো সূত্র জানিয়েছে, জাকির হোসেন কৃষিকাজের জন্য পাউবো থেকে ১১ শতাংশ জমি লিজ নিয়েছিলেন কয়েক বছর আগে। তবে শর্ত লঙ্ঘন করায় তার লিজ নবায়ন করা হয়নি। তিনি নতুন করে আরও জমি লিজ নেওয়ার আবেদন করেছেন।

জাকির হোসেন কৃষিকাজ করতেন। ২১ বছর আগে সৌদি আরব যান। এখন ফিরে এসে দোতলা বিল্ডিংয়ের পাশে রাস্তার ওপারে বেড়িবাঁধের আরও জমি তিনি দখল নিতে শুরু করেছেন। এরই মধ্যে তিনি মাটি ফেলে জলাশয় ভরাট করে লম্বালম্বি টিনের ছাপরা বানিয়ে তুলেছেন দোকানঘর।

সংলগ্ন জমির প্রতিবেশী কাজী মঈনুল আলম বলেন, ২০০৫ সাল থেকে এই পুকুরের জমি আমাদের লিজ নেওয়া। কয়েকদিন আগে একদিন ভোরবেলা জাকির হোসেন সেখানে ঘর তুলেছেন। অভিযোগ পেয়ে অবদার লোকেরা এসেছিলেন সরেজমিনে দেখতে। তার ছেলেরা এমন একটা হট্টগোল বাঁধাল, তা দেখে তারা চলে গেছেন।

পাশের ওয়ার্ডের মেম্বার শাহাদাত হোসেন বলেন, অনেক আগে ১৯৬২ সালে এই জমি ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। পরে এটি অবদা কিনে নেয়। তবে জাকির হোসেন কীভাবে কিনেছে তা জানি না।

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০০৯ সালে দুইটি দলিলে জাকির হোসেন পাঁচজন ব্যক্তির কাছে থেকে ২ একর ৫৩ শতাংশ জমির মধ্যে পৌনে ৮ শতাংশ করে জমি রেজিস্ট্রি করেন। দলিলে দাতারা হলফনামায় বলেন, এই সম্পত্তি সরকারি খাস/অর্পিত বা পরিত্যক্ত সম্পত্তি নয় বা অন্য কোনোভাবে সরকারের ওপর বর্তায় নাই। তিনি ২০১৩ সালে গোপালপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে ৮টি দাগে ১ একর ৫ শতাংশ ও ২ এক ৯৬ শতাংশ জমি বাবদ ১৪২০ বঙ্গাব্দের ২ টাকা খাজনা পরিশোধ রসিদ সংগ্রহ করেন। ২০২২ সালে তিনি ওই মৌজার ৮৬২ ও ৮৬৩ নং দুইটি দাগের ৮ শতাংশ জমি লিজের আবেদন করেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে।

পাউবোর নথিতে দেখা যায়, ২৭৮/৬১-৬২ এল.এ. কেসের মাধ্যমে ওই দুইটি দাগের ৩৬ শতাংশ জমিসহ ১১ একর ১১ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়। বেরিবাঁধ নির্মাণের পর ওই দুইটি দাগের ২২ শতাংশ জমি প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ২০০৫ সালে কৃষিকাজের জন্য সাময়িক বা বাৎসরিক ভিত্তিতে লিজ দেওয়ার সুপারিশের পর মঈনুল পাউবোর ওই লিজের অন্যতম শর্ত হলো, লিজি শুধুমাত্র কৃষিকাজেই জমি ব্যবহার করতে পারবেন। কোনো প্রকার অবকাঠামো বা স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।

এ ব্যাপারে জাকির হোসেন বলেন, আমার মালিকের নামে রেকর্ড আছে। এসএ রেকর্ড মতে আমি কিনেছি এবং বাড়ি করে ভোগদখলে আছি। বিএস রেকর্ড হয়নি। নকশা করে গেছে।

এই জমি পাউবোর অধিগ্রহণ করা এই কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি কিছুটা তাদের আছে, সেটাও ঠিক। আমার ভাই মিনিস্টারিতে আছে। জমিটা সেই ঠিক করেছে। সরকারিভাবে যেইটা করতে হয়। একসময় নদী ভাঙনে সর্বহারা এই ব্যক্তির দাবি, গোপালপুরের এক মৌজায় তার ৩ একর জমি আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল কালাম বলেন, এটা অবদার জায়গা। তারা লিজ কেটে এনেছে।

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইনামুল হাসান বলেন, এটি অবদার জায়গা, আবার ব্যক্তিমালিকানায় কেনা সেটিও জানি। এটি নিয়ে আমরা শালিসও করে দিয়েছি। দুই পক্ষের লিজ নেওয়া। হয়তো কমবেশি। অবদা থেকে লোক এসে দেখে গেছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, গোপালপুর বাজারে পাউবোর লিজকৃত জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে একটি কমিটি করা হয়েছে। সরেজমিনে তদন্তে যদি কেউ অবৈধ দখল করে থাকেন, তাহলে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে উচ্ছেদ করার জন্য ব্যবস্থা নেব। আমরা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের সহায়তায় তাকে আমাদের লিজকৃত সম্পদ থেকে উচ্ছেদ করে দেব।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।