লক্ষ্মীপুর: আওয়ামী লীগ-বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় ত্রি-মুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় লক্ষ্মীপুর শহর। এ ঘটনায় মারা গেছেন কৃষক দলের একজন, আহত পুলিশসহ শতাধিক।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেলে ৪টার পর বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরের গোডাউন রোড থেকে বাজার সড়ক হয়ে দক্ষিণ তেমুহনীতে যাচ্ছিলেন।
তাদের একটি অংশ সামাদ মোড় এলাকায় পৌঁছলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সজিব (২৫) নামে কৃষক দলের একজন কর্মী গুরুতর আহত হন। ছুরিকাঘাত থেকে বাঁচতে তিনি পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নেন এবং সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
এরপর বিএনপির পদযাত্রাটি দক্ষিণ তেমুহনী হয়ে রামগতি সড়কের দিকে ঝুমুর সিনেমা হল এলাকায় যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থানরত পুলিশ সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীদের হাইওয়ে সড়কে উঠতে বাঁধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও লাঠি নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ারগ্যাস এবং ছররা গুলি করে।
এখান থেকে পিছু হটে বিএনপি কর্মীরা রামগতি সড়কের আধুনিক হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেয়। সেখানে একটি হাসপাতালের ফটকে এবং মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে তারা মটকা মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আসে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় সদর হাসপাতাল থেকে ৬৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। হাসপাতালে পুলিশের এএসপি (সদর সার্কেল) সোহেল রানা, সদর থানার ওসি মোসলেহ উদ্দিনসহ পুলিশের ১৬ জন সদস্য চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
রাতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ পদযাত্রার আয়োজন করি। পথে পথে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা বাঁধা দিয়েছে। সামাদ মোড় এলাকায় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে আমাদের লোকজনের ওপর চোরাগোপ্তা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এতে আমাদের একজন কর্মী নিহত হয়। নিহত যুবক চরশাহী ইউনিয়নের কৃষক দলের সদস্য। তাকে মদিন উল্যা হাউজিংয়ের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। দেড় থেকে দুইশ নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করি। শহরের সামাদ মোড় এলাকায় কি হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। শান্তি সমাবেশে আমাদের প্রায় ১০-১২ হাজার লোক অংশ নিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বিএনপির কারও ওপর আক্রমণ করেনি। উল্টো আমাদের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে দলবদ্ধ হয়ে আসার সময় বিএনপির লোকজনের আক্রমণের শিকার হয়েছে।
জেলা সদর হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিফ্রিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ বলেন, বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। তারা সোমবার আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদেরকে রুট দিয়ে দিয়েছি, যেহেতু আওয়ামী লীগেরও একটি শান্তি সমাবেশ ছিল। তাদের (বিএনপি) হাইওয়ে সড়কে ওঠা নিষেধ ছিল। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা যখন হাইওয়েতে ওঠার চেষ্টা করে, পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। তারা পুলিশকে পেছন থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তাদের প্রত্যেকের হাতে জাতীয় পতাকার সাথে লাঠি ছিল। পুলিশ ধৈর্য ধারণ করে তাদের বাঁধা দিয়েছিল, তারা যেন হাইওয়েতে না যায়। কিন্তু আমাদেরকে ওভারটেক করে যেতে চেষ্টা করেছে। আমাদের ওপর ইটপাটকেল মেরেছে। আমাদের ২৫-৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তখন আমরা লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়েছি। তারা উশৃংখল হয়ে আগুন দিয়েছে, দোকানপাট ভাংচুর করেছে। তাই আমরা টিয়ারগ্যাস, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছি। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট পর তাদেরকে নিবৃত্ত করতে সক্ষম হই। তারা আধুনিক হাসপাতালে পুলিশদের অবরোধ করে রাখে। অতিরিক্ত ফোর্স এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ২৫-৩০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে সদর হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে। শহরের নিরাপত্তার জন্য র্যাব এসেছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫২ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২৩
এমইউএম/এমজে