ঢাকা: ১১ বছর হয়ে গেছে, শেষ হয়নি ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে টঙ্গী পর্যন্ত চার লাইন রেলপথ প্রকল্প। ২০১২ সালে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম রুট ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ করার কথা ছিল।
এ দীর্ঘ সময়ে অবশ্য টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে দ্বিতীয় ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ শেষ হয়েছে। তবে আগামী ৩ বছরেও শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই টঙ্গী-ঢাকা সেকশনের কাজ। বর্তমানে এ প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ২৯ শতাংশ। ব্যয়ও বেড়েছে তিন গুণ।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপের সময় এ ব্যাপারে নিজের অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া।
প্রকল্প সূত্র বলছে, ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে দ্রুততম সময়ে ঢাকায় ট্রেন প্রবেশ ও বের করতে প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে; ২০১২ সালের নভেম্বরে। ২০১৫ সালে এটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতা, ঠিকাদার নিয়োগ, অর্থায়ন জটিলতা ছিল এ প্রকল্পের শুরুর বাঁধা। এসব থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগে ৭ বছর। ২০১৯ সালে শুরু হয় প্রকল্পের ভৌত কাজ। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের জুনে।
কিন্তু ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর রেলওয়ের জায়গায় নেওয়া হয় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। ফলে এখন চার বছর বাড়িয়ে প্রকল্পের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্প সূত্র আরও জানিয়েছে, বনানী থেকে মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের কাজের কারণে রেলের এ প্রকল্পটির কাজ করা যাচ্ছে না।
নাজনীন আরা কেয়া বলেন, রেল লাইনের কাজের একটা বড় অংশে চলমান রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। ফলে সেখান দিয়ে রেলের ট্রাক বসানোর মতো জায়গা নেই। এক্সপ্রেসওয়ের কাছ থেকে জমি বুঝে নিয়ে কাজ এগিয়ে নিতে হবে। এখন বনানী থেকে টঙ্গী অংশ পর্যন্ত কাজ চলমান।
প্রকল্প ব্যয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শুরুতে ব্যয়ের জন্য অর্থ ধার্য ছিল ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ১ হাজার ১০৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে তবে এবারের প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় তিন গুণ বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি ৫৫ টাকা করা হয়েছে।
ব্যয় বাড়ানোর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে প্রকল্পের পরিধি দ্বিগুণ করা। আগে প্রায় ৭০ ভাগ কাজের অগ্রগতি হলেও সংশোধিত অগ্রগতি ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ।
ভবিষ্যতে ট্রান্স এশিয়ান রেললাইনে টঙ্গী-ঢাকা সেকশন যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের পরিধি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক নাজনীন আরা কেয়া। তিনি বলেন, রেল ট্রাকের কিছু অংশে আগে ৪১ কেজি থেকে এখন ৬০ কেজি রেল স্থাপন, ১৩৭ দশমিক ৯৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে। তেজগাঁও, বনানী, টঙ্গী ও ধীরাশ্রম রেলওয়ে স্টেশন পুনর্নির্মাণ ও ভবনে আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে। টঙ্গী সেতুর নকশা পরিবর্তন করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চাহিদা অনুযায়ী ২ দশমিক ৮ মিটার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র নিশ্চিত করেছে, সর্বশেষ বনানী রেলস্টেশনের আগে পর্যন্ত জায়গা রেলওয়েকে বুঝিয়ে দিয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরপর তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ আগস্টে আর কমলাপুর পর্যন্ত ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রেলওয়েকে বুঝিয়ে বেবে এক্সপ্রেসওয়ে।
নাজনীন আরা কেয়া বাংলানিউজকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের কারণে বনানী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত রেলপথের কাজ শুরুই করা যায়নি। তবে তারা নতুন করে জায়গা হস্তান্তরের যে সময় দিয়েছে তাতে বর্ধিত সময়ের মধ্যে (২০২৭ সাল) প্রকল্প কাজ সম্পন্ন করা যাবে নতুন জটিলতা সৃষ্টি না হলে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বাংলানিউজকে বলেছেন, ২০২০ সালে রেলের কাছে থেকে জায়গা বুঝে নিয়েছি। এরপর এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বস্তি উচ্ছেদসহ কাওলা, কড়াইল, কাওরানবাজার, তেজগাঁওতে জায়গা পুনর্দখল করায় রেলওয়েকে জমি উদ্ধারে ভোগান্তি পোহাতে হবে না। । তারপরও আমাদের (এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ) তারা দোষ দেয়, কাজ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪০ ঘণ্টা, ২১ জুলাই, ২০২৩
এনবি/এমজে