ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জমি সংক্রান্ত বিরোধে ব্যবসায়ী এখলাছকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
জমি সংক্রান্ত বিরোধে ব্যবসায়ী এখলাছকে হত্যা

ঢাকা: রাজধানীর হাজারীবাগের জমি ব্যবসায়ী এখলাস হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী লেদার মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, কামরাঙ্গীরচরের একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ২০ লাখ টাকা চুক্তিতে ভাড়েটে খুনি দিয়ে এখলাসকে হত্যা করা হয়।

‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লেদার মনির।

মনির একসময় হাজারীবাগ এলাকায় ২০ টাকা দিনমজুর হিসেবে ট্যানারির চামড়া পরিষ্কার করতেন। এখন হাজারীবাগে চারটি ট্যানারির মালিক তিনি। এছাড়া মনির আন্ডারগ্রাউন্ডের অস্ত্র ব্যবসা থেকে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

শনিবার (২২ জুলাই) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, এখলাসকে খুনের জন্য উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল ঈদুল আজহার আগের রাত। সেই রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন এখলাস। পরে তিনি আর বাসায় ফেরেননি। নিখোঁজ হওয়ার দুদিনের মাথায় কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তার বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এখলাস খুনের পর এ ঘটনায় গত ১ জুলাই কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এ ঘটনায় পর্যায়ক্রমে মূল পরিকল্পনাকারী মনির হোসেন ওরফে লেদার মনির ওরফে কোম্পানি মনিরসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।  

এ হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা এড়াতে মনির জঙ্গিদের মতো ‘কাটআউট’ পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। একপর্যায়ে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

ডিবি প্রধান বলেন, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ গত ২০ জুলাই থাইল্যান্ড থেকে আকাশ পথে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দর এলাকা থেকে পাসপোর্টসহ গ্রেপ্তার করে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঝন্টু মোল্লাকে। তিনি মূলত মনিরের ক্যাশিয়ার।

বর্তমানে ঝন্টু চার দিনের রিমান্ডে আছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে এলিফ্যান্ট রোড ও কেরানীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে এখলাছের হত্যাকারী আ. রহমান ওরফে রহমান কাল্লু এবং সমন্বয়কারী মো. এসহাককে গ্রেপ্তার করা হয়।

এছাড়া ডিবির অপর দুইটি টিম মাগুরা এবং যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ফয়সাল এবং মূল পরিকল্পনাকারী মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ সময় মনিরের কাছে দুটি বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি মোবাইল ফোন, ২২ হাজার টাকা ও পাঁচ হাজার ইন্ডিয়ান রুপি উদ্ধার করা হয়। মনিরের পাসপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় গত ১৫ জুলাই সকালে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে তিনি কলকাতায় পালিয়ে যান। পরে অবৈধভাবে দেশে ঢুকলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের কারণ প্রসঙ্গে ডিবি প্রধান বলেন, হাজারীবাগ ও সাভার এলাকায় একাধিক ট্যানারি কারখানার মালিক কোম্পানি মনির একজন ভূমি দস্যূ এবং দালাল। বিভিন্ন সময়ে তিনি ভিকটিম এখলাছকে দিয়ে জমি দখল এবং ক্রয়-বিক্রয়ের কাজ করিয়েছেন। কামরাঙ্গীরচর থানাধীন সিএস ২২ দাগের একটা বড় জমিতে নিহত ভিকটিম এখলাছের ৪০ শতক জায়গা রয়েছে যার অধিগ্রহণ মূল্য প্রায় শত কোটি টাকা।

মনির এ জায়গাটি নিজের দখলে নিয়ে সমুদয় অধিগ্রহণ মূল্য গ্রাস করতে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এ চেষ্টা রোধ করতে ভিকটিম এখলাছ একাধিক মামলা দায়েরসহ ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ করেছিলেন। নানা ফন্দি ফিকির করে ব্যর্থ হয়ে মনির এ হত্যার পথ বেছে নেন।

তিনি বলেন, মনির হোসেনের বাবা আব্দুর রহিম হাজারীবাগের ট্যানারি কারখানায় ডেইলি লেবারের কাজ করতেন ৭০ দশকে। ১৯৮০/ ৮২ সালে বাবার সঙ্গে মনির ট্যানারি কারখানায় চামড়ার ময়লা পরিষ্কারের কাজ নে়ন। পরে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের পৃষ্ঠপোষকতায় নিজেই কাঁচা চামড়া কেনাবেচা শুরু করেন। একই সঙ্গে জমি দখল ও জমির ব্যবসা করতেন তিনি। এভাবেই শূন্য থেকে তিনি হয়ে ওঠে চার থেকে পাঁচটি ট্যানারি এবং শত শত কোটি টাকার মালিক। ২০০২ সালে সিকদার পেট্রোল পাম্পের সামনে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় রুহুল আমিনকে। রুহুল আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন মনির। ২০১৫ সালে ইফতারের আগ মুহূর্তে জসিম ওরফে গুন্ডা জসিম নামে একজন ব্যাক্তিকে হাজারীবাগ বাজারের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে গুলি করে হত্যা করান মনির।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
পিএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।