বরিশাল: ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে ছত্রকান্দা এলাকায় ঘটা বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে বাস দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জন হতাহত হয়েছেন। স্থানীয় ও বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা এত প্রাণহানির ঘটনার তদন্ত চান।
বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের একজন গাবখান ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী জুয়েল রানা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে মোবাইলে স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলাম। ওইসময় বাসের চালক সুপারভাইজারের সাথে কথা বলছিল। হঠাৎ করেই বিকট শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি বাসটির চারপাশে পানি। চালক তার আসন থেকে উঠে বের হয়ে যাচ্ছে। শব্দটি চাকা ব্লাস্টের নাকি পানিতে পড়ার তা বলতে পারবো না।
বাসটি দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ার বিষয়টি স্ত্রীকে জানাতে পেরেছিলেন জানিয়ে জুয়েল বলেন, পুকুরে পড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বাসটির ভেতরে পানির প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়। আর ওইসময় নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে থাকি। পানির মধ্যে ঘুষিতে জোর সৃষ্টি না হওয়ায় জানালার গ্লাসও ভাঙতে পারছিলাম না। পরে যে যেভাবে পেরেছি বের হয়েছি।
বাসটির ৫২ সিটে যাত্রী ছিল। ১০-১৫ জন যাত্রী দাঁড়িয়েও যাচ্ছিলো। পানিতে পড়ার পর ৩০-৩৫ জন নিজের চেষ্টায় উঠতে পারে। বাকিদের মধ্যে কয়েকজনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে। আর যারা পারেনি তাদের মৃত্যু হয়েছে। এক মা ও তার শিশু সন্তানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু টেনে বাসের বাহিরে আনতে পারিনি। তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বাসের অপর যাত্রী রাজাপুরের গালুয়া এলাকার বাসিন্দা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জলিল আকন বলেন, আল্লাহ বাঁচাইছে। রাজাপুর থেকে বাসে ওডার পর খালি দোয়া কালাম পড়ছি। ড্রাইভার যে কি চালানডাই না চালাইছে। বাসে এতো লোক ছিল যে ঠিকমতো দাঁড়াইতেও পারি নাই। আমার স্ত্রী ড্রাইভারের পেছনে আছেলে। এমনতারাই তলাইয়া গেছি। এরপর কেউ পা ধরে টাইন্যা বাইর করছে। পানি ছাড়া আর কিছু দেহি নাই, মনেও নাই।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অপর যাত্রী সোহেল বলেন, ঘটনার আগ মুহূর্তে চালক কারও সাথে তর্কাতর্কি করছিল। মহিলাদের কণ্ঠও শোনা যাচ্ছিলো তখন। আর এরমাঝেই সামনের বাঁ পাশের চাকাটা কাত হতে হতে পুকুরে পড়ল। আমরা পানির মাঝে একেবারে ডুবে গেছিলাম। বাঁচবো তাই-ই তো বুঝিনি। অন্যরা যখন বাস থেকে বের হচ্ছিল, তখন তাদের পা ধরে আমিও বের হই। তবে আমার পাশে থাকা নারী ও শিশুটি সেখানে আটকা পড়ে মারা গেছে।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ফারুক সরদার বলেন, এক যাত্রী জানিয়েছেন বাসটি বেপরোয়া গতিতে চালানো হচ্ছিল। চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। একটি মোটরসাইকেল সামনে চলে এলে তিনি সেটিকে সাইড দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারান।
এদিকে দুর্ঘটনা কবলিত এলাকার স্থানীয়দের অনেকেই জানান বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে বাসটি একটি থ্রি-হুইলারকে পাশ দিতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। আবার দুর্ঘটনার শুরুতে বিকট শব্দ হওয়ায় কেউ দাবি করেছেন চাকা ব্লাস্ট হওয়ার বিষয়টি। আবার, উদ্ধারের পর চাকা ব্লাস্টের কোনো আলামত দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে উদ্ধার কাজে সহায়তা করা সেচ্ছাসেবকরা। তবে বাসটির ফিটনেস ও মহাসড়ক ঘেঁষে পুকুর কাটাকেও দুষছেন অনেকে। তা ছাড়া বাসের চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঘটনার পরই তারা পালিয়ে যান।
এসব বিষয়ে ঝালকাঠি জেলা বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক নাছির উদ্দীন আহমেদ জানান, আমরা সব বিষয় খতিয়ে দেখছি। তদন্ত করে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাশার স্মৃতি পরিবহন নামে বাসটি চালাচ্ছিলেন মোহন নামে এক চালক। তিনি অনেক বিজ্ঞ, তাই তদন্ত না করে সঠিক করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
যাত্রীরা বাসের অতিরিক্ত গতি ও চালকের উদাসীনতাকে দুষলেও তদন্ত করে দুর্ঘটনার সঠিক কারণ বের করার কথা জানিয়েছেন ঝালকাঠির সহকারী পুলিশ সুপার মাসুদ রানা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০২৩
এমএস/এমজে