সিলেট: সিলেটে আড়াই বছর পর অজ্ঞাত কিশোর (১৫) হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রহস্য উন্মোচনের পাশাপাশি খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দা উদ্ধার ও জড়িত ২ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন সিআইডি সিলেট জোনের পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা।
তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি বিকেল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে সিলেটের শাহপরান (র.) এলাকা উত্তর দলইছড়া কাউতলা এলাকায় মোখলেছুর রহমানের বাগানের ছড়া থেকে অজ্ঞাত (১৫) কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এক নারী মোখলেছুর রহমানের কেয়ারটেকার মামলার বাদী ফয়েজ আহমদকে জানালে তিনি বাগান মালিক ও স্থানীয় খাদিমপাড়া ইউপির সাবেক সদস্য বদরুল ইসলাম আজাদকে ফোনে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি বাড়ির কেয়ারটেকার ফয়েজ আহমদকে বাদী করে একটি হত্যা মামলা (২৭(১)’২১) নেয় এসএমপির শাহপরান (র.) থানা পুলিশ।
সিআইডির এসপি সুজ্ঞান চাকমা বলেন, মামলাটি ক্লুলেস ছিল। দুই তদন্ত কর্মকর্তার হাত বদলের পর মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। ২০২২ সালের ২৭ জুলাই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেই সিআইডির পরিদর্শক মুহাম্মদ শামসুল হাবিবকে।
তৃতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে শামসুল হাবিবের নেতৃত্বে সিআইডির টিম প্রথমে নিহত অজ্ঞাত কিশোরের পরিচয় নিশ্চিত হন। নিহত কিশোরের বাবা নগরের ঘাসিটুলার মৃত ধনু মিয়ার ছেলে মো. সেলিমের কাছে ছবি দেখে তার ছেলে শাহরিয়ার ওরফে শাকারিয়ার (১৫) মরদেহ শনাক্ত করেন এবং ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হন।
এরপর ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর থানাধীন সানকিভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে ও নগরের ঘাসিটুলা ৭৫ নং বাসার বাসিন্দা সেলিম আহমদকে (২১) ও সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আসানুর (১৭)।
বুধবার (২৬ জুলাই) রাত সোয়া ৯টার দিকে নগরের ঘাসিটুলা ৭৫ নং বাসার সামনে থেকে সেলিম আহমদকে এবং রাত ৯টার দিকে কাজিরবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া হত্যায় ব্যবহৃত দা ঘটনাস্থলে পুকুর সেচকালে পেয়ে সংরক্ষণে রেখেছিলেন মামলার বাদী। পরে আসামিদের শনাক্তমতে সেটি আলামত হিসেবে সংগ্রহ করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসপি সুজ্ঞান চাকমা আরো বলেন, নিহতের পরিচয় শনাক্ত করে খুনের মুটিভ উদঘাটনে নেমে এ দুই যুবককে গ্রেপ্তার করি। মূলত আসামিরা একত্রে চলাফেরা ও মাদক সেবনে করতো। এরই জের ধরে শাহরিয়ারকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে ৬ জন ঘটনাস্থল দলইপাড়া এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রথমে চাকু দিয়ে আঘাত করে। এরপর গ্রেপ্তার সেলিমের দা দিয়ে মাথা, বুকে, পেটে, পিঠে কুপিয়ে ও একাধিক ছুরিকাঘাত করে। আটকের পর পরই যখন স্থানীয় জনতা জিজ্ঞাসা করছিলো তাদের কেন আটক করলেন, তখন তাদেরকেই বলা হয়, তোমরা বলো, কেন তোমাদের আটক করা হয়েছে? তখন জনসম্মুখে তারা খুনের ঘটনা অকপটে স্বীকার করে এবং ফোনে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে সেটি তদন্ত কর্মকর্তা আমাকেও শুনিয়েছেন।
এছাড়া আসামিদের তথ্যমতে ঘটনাস্থলে পুকুরে আলামত খুঁজতে স্থানীয় জামাল আহমদ সিআইডির টিমকে বলেন, পুকুর সেচকালে একটি দা পেয়েছেন। তখন আসামি সেলিম দা শনাক্ত করে এটি তার বলে স্বীকার করে। এ দা দিয়ে কুপিয়েছিল বলেও জানায়। মূলত শাহরিয়ার উগ্র ছিল, এরআগে সহপাঠীদের কয়েকজনকে নানা কারণে ছুরিকাঘাত করে। যে কারণে ছোটখাটো দোষের জন্য পরিকল্পিতভাবে শাহরিয়ারকে হত্যা করে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত অপর ৩ আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মুহাম্মদ শামসুল হাবিব বলেন, খুনের ঘটনায় জড়িতদের বিকেলে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় ঘটনার দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২৩
এনইউ/জেএইচ