ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থায় মেয়েদের সামনে নিয়ে আসা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু সেদিক থেকে আমরা সফল।
শনিবার (২৯ জুলাই) ‘বাংলাদেশ স্টার্টআপ সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
হোটেল ইন্টারকিন্টনেন্টালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে যখন ফিরে আসি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব এটাই ছিলো আমার প্রত্যয়, এটাই ছিল আমার প্রতিজ্ঞা। একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা অন্যদিকে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব। বাবার (বঙ্গবন্ধু) বড় সন্তান হিসেবে তার স্বপ্নটা আমার জানা ছিল। অনেক ঝড় ঝাপটা পাড়ি দিয়ে ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন থেকে আমাদের যাত্রা শুরু। বঙ্গবন্ধু সব সময় আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই চিন্তা করেছেন। এখানে এসে আমি আন্দন্দিত যে আমরা যে লক্ষ্য স্থির করেছি, জ্ঞান, বিজ্ঞান, কারিগরি, দক্ষ জ্ঞান সম্পন্ন একটি জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা, সেই ক্ষেত্রে আজ সকলে তৎপর এবং এগিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর উদ্ভাবনী, উদ্যোক্তাগণ তারাই হলেন স্টার্টআপ যারা তাদের মেধা জ্ঞান সৃজনশীলতা এবং অভিজ্ঞিতা ব্যবহার করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে যাচ্ছেন বা ভবিষ্যতে যারা রাখবেন। এরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এখানে প্রায় ৫ শতাধিক স্টার্টআপ অংশ গ্রহণ করছেন। সব থেকে আনন্দের এর মধ্যে ৩জন নারী আছেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা অনেক রক্ষণশীল ছিল। সেই অচলায়তন ভেদ করে আমাদের দেশের মেয়েদেরকেও সামনে নিয়ে আসা শিক্ষা-দীক্ষায়, সব দিক থেকে এটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু আমরা মনে করি সেটা দিক থেকে আমরা সফল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গতকালই আমরা দেখেছেন যে, পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে মেয়েরাই বেশি পাস করেছে। অবশ্যই এটা প্রশংসাজনক, আমি মনে করি মেয়েরা এতো সাফল্য দেখালো, ছেলেরা কেন পিছিয়ে আছে? পিছিয়ে থাকবে না। ইতোমধ্যে আমি আমার শিক্ষামন্ত্রীসহ সকলকে বলেছি এটা আপনাদের দেখতে হবে কেন ছেলেরা পিছিয়ে আছে। কিন্তু একসময় ছিল মেয়েদের চেয়ে ছেলেরা এগিয়ে। আমি আমাদের মেয়েদের অভিনন্দন জানাচ্ছি যে, তারা এভাবে এগিয়ে আসছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে তার সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা ৯৬ সালের ক্ষমতায় এসে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। আমরা সব থেকে পিছিয়ে ছিলাম এই কারণে আমাদের এই অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) সেই সময় এদেরকে সংযোগ করে দিচ্ছে, আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলি নিচ্ছে, বাংলাদেশের সে সুযোগ হয়েছিলো বিনা পয়সায় নিতে। কিন্তু বিএনপি ক্ষশতায়, বেগম খালেদা জিয়া না না ওসব করা যাবে না বাংলাদেশের সব সিকিউরিটি আউট হয়ে যাবে। আমি জানি না কীভাবে এটা আউট হয়ে যাবে। বাংলাদেশের বিনামূল্যে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ এসেছিল সেই সুযোগটা বাংলাদেশ গ্রহণ করেনি। ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় পর তখন দেখি খুব ব্যয়বহুল। তারপরও এই উদ্যোগ নেই। কীভাবে আমরা সংযুক্ত হব, সজিব ওয়াজেদ জয়কে আমি বলেছিলাম, তার কয়েকজন বন্ধুবান্ধব তাদের নিয়ে যে, তোমরা একটু খুঁজে বের করো কীভাবে কোন দেশ থেকে এই লিংকটা আনতে পারি। যে ব্যবস্থাটাও নেওয়া হয়। আমরা ৯৭ সালের থেকেই উদ্যোগ গ্রহণ করি, ২০০০ সালে সাবমেরিন ক্যাবল প্রকল্প একনেকে অনুমোদনও করে দিয়ে যাই। আমরা উদ্যোগটা নিয়েছিলাম সেটা কাজে লেগেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কম্পিউটারের ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে দিই যাতে মানুষের হাতে হাতে যায়। সেই সঙ্গে আমরা স্কুলেও যাতে কম্পিউটার দেওয়া যায় সে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম। সমস্ত ব্যবস্থা নিয়েছি, নেদারল্যান্ড ছিল আমাদের পাশে। মাত্র অর্ধেক দামে দেবে, অর্ধেকটা অনুদান আর অর্ধেকটা আমরা পয়সা দেব। ১০ হাজার কম্পিউটার কিনব, ১০ হাজার স্কুল আমরা ঠিক করলাম যে, প্রত্যেকটা স্কুলে আমরা দেব। সমস্ত ঠিক, টাকা-পয়সা দেওয়া কিন্তু সেই কম্পিউটার আর আসেনি। এর পেছনে ছোট্ট একটি কারণ হচ্ছে একটি ফুলের নাম। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। এর পর এলো বিএনপি সরকার, বেগম খালেদা জিয়া। আপনারা জানেন, নেদারল্যান্ডের জাতীয় ফুল টিউলিপ। আমার ছোট রেহানার মেয়ের নাম হচ্ছে টিউলিপ। খালেদা জিয়াকে কেউ বুঝালো যে এই টিউলিপ হচ্ছে শেখ রেহানার মেয়ের নামে। এটা নিশ্চয়ই তার কোম্পানি সে জন্য এটা নেওয়া যাবে না। কোথায় রেহানা থাকে লন্ডনে তার মেয়ে সেই ছোট্ট। আর এদিকে আমরা নিচ্ছি নোদারল্যান্ড থেকে তাদের কোম্পানির নাম, সে জন্য বাতিল করে দেয়। ওরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করে, ৬০ কোটি টাকা আমাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয় এবং মামলা চলাকালীন বহু টাকাও খরচ করতে হয়। আবার আমরা যখন ক্ষমতায় আসি দেন দরবার করে কিছুটা কমাতে পেরেছিলাম। ১০ হাজার কম্পিউটারও চলে গেলো আর উল্টো জরিমানা দিতে হলো। মাঝে মাঝে এই ধরনের সমস্যায় বাংলাদেশকে পড়তে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয়বার আমরা যখন ক্ষমতায় আছি, ঘোষণা দিয়েছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। অনেক ব্যঙ্গ শুনতে হয়েছে সেই সময়, অনেক কথা শুনতে হয়েছে। এটা আবার কে ব্যবহার করবে, ডিজিটাল আবার কী, এটা কি। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল মাত্র ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ চলে গেলো বলতো, এই তো ডিজিটাল বাংলাদেশ। কোনো একটা কিছু হলেই সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে আমাদেরকে ব্যঙ্গ করা হতো। যে ব্যঙ্গ শুনলেও আজকে আমরা কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। অবশ্য রাজনীতি করতে গেলে, সরকার চালাতে গেলে প্রতিনিয়ত তো সমালোচনা শুনতেই হয়, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যদি স্থির থাকে, আত্মবিশ্বাস থাকে যে এটা করতে হবে তাহলে কোনো বাধাই বাধা না, কোনো ব্যঙ্গ ব্যঙ্গ না। সাফল্য এনে দেওয়া যায় এটা আমরা প্রমাণ করেছি। আজকে গ্রামে বসেও ফ্রিল্যান্সাররা ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে আসছে। ১৫ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থীকে একাডেমিক ডেভেলপমেন্ট কোর্স প্রদান করা হয়েছে। ২০২২ পর্যন্ত ৯২ লাখ সেবা ও প্রশিক্ষণ পেয়েছে যার ৫৫ ভাগের বেশি হচ্ছে নারী। এখানে আবার ৫৫ ভাগ, ছেলেরা কমে গেলো কেন, এটা তো ভালো করে দেখা উচিত। আজ সারা দেশে স্টার্টআপ একটি মর্যাদাপূর্ণ নাম। ডিজিটাল অর্থনীতির সুফল যা আমাদের ছেলে মেয়ে উভয়ই পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনাইদ আমমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শফিউল আরেফীন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০২৩
এসকে/এসএএইচ