ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সৈয়দপুরের সেই চাঁদনীর ফের কপাল পুড়লো!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১, ২০২৩
সৈয়দপুরের সেই চাঁদনীর ফের কপাল পুড়লো!

নীলফামারী: নীলফামারীর সৈয়দপুরে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মেয়ে সেই চাঁদনীর ফের কপাল পুড়লো। বিয়ের তিন মাসের মাথায় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে তার স্বামী আলম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে।

শোকাহত নববধূ চাঁদনী বাবার বাড়িতে এখন নিস্তব্ধ একাকী জীবনযাপন করছেন। সংবাদকর্মী বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন না। ফলে দুর্ঘটনার এ সংবাদটি সংবাদকর্মীদের হাতে দেরিতে আসে।

পারিবারিক সূত্র মতে, চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে চাঁদনীর বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। বর আলম হোসেন সৈয়দপুর শহরের মরহুম জয়নুল আবেদীন ও হাসিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। আলম পেশায় ঢাকায় সাভারের একটি কাগজ মিলের শ্রমিক। এক লাখ ৫১ হাজার টাকা দেনমোহরে অনুষ্ঠিত বিয়েতে আমন্ত্রিতরা সবাই কনে চাঁদনীকে আশীর্বাদ করেন। কিন্তু চাঁদনীর কপালে সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি। মাত্র তিন মাসের মাথায় গত ২৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে আলম হোসেনের মৃত্যু হয়।

চাঁদনীর বাবা কায়সার আলী বলেন, আমি একজন হতদরিদ্র। বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে অনেক পরিশ্রম করে টাকা পয়সা জমা করেছিলাম। কিন্তু গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাসায় আগুন লাগার ঘটনায় জমানো সেই টাকাও পুড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় বিয়ের সব আয়োজন। এ নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে বর পক্ষের সহানুভূতি ও দেশের বিভিন্ন জনের আর্থিক সহযোগিতায় মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরে স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন জামাতাকে হারিয়ে অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে আবার মনঃকষ্ট সঙ্গের সাথি হলো।

চাঁদনীর ছোট বোন অনার্স পড়ুয়া নওশীন আকতার জানান, দুলাভাই এক সপ্তাহ ধরে জন্ডিস ও কিডনিজনিত রোগে ভুগছিলেন। ঘটনার দিন মধ্যরাতে হঠাৎ করে অসুস্থতা বেড়ে গেলে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ভোর ৫টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সৈয়দপুরের পার্শ্ববর্তী দিনাজপুরের পার্বতীপুর ল্যাম্প হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরও বলেন, বোনের পেটে বাচ্চা। আমার বোন ওই শিশুকে নিয়েই বাকি জীবনটা কাটাতে চান।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের পুরাতন মুন্সিপাড়ায় এক ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে কাওসার আলী ও মোছা. ইয়াসমিন দম্পতির বড় মেয়ে চাঁদনীর বিয়ের জন্য জমানো টাকা পুড়ে যায়। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে মো. আলমের সাথে চাঁদনীর বিয়ের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তার আগেই আগুনে টাকা পুড়ে যাওয়ায় বিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সেই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির অনার্স পড়ুয়া ছোট মেয়ে নওশীন আকতারের বই পুস্তক,
পোশাকসহ লেখাপড়ার বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে তারও লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে।

পরে এ নিয়ে বাংলানিউজসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। আর প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নজরে আসে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের। তারা চাঁদনীর বিয়ে ও নওশিনের লেখাপড়ার জন্য পরিবারটির পাশে দাঁড়ান।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, আগস্ট ০১, ২০২৩
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।