ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনে যিনি সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) এ মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার শ্রেষ্ঠ অর্জন মহান স্বাধীনতা লাভ করে। বাঙালি জাতির জন্য বঙ্গবন্ধুর এই আজীবন লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের নেপথ্যের প্রেরণাদাত্রী ছিলেন তার সহধর্মিণী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফজিলাতুন্নেছা অফুরন্ত প্রেরণার উৎস হয়ে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারাগারে বন্দি থাকার সময় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ এবং রাজনৈতিক দিক নির্দেশনা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সময় তার কাছ থেকে দলের জন্য নির্দেশনা নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা।
১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তার ডাকনাম ছিল রেণু। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক এবং মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। এক ভাই, দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার সন্তান শেখ মুজিব দীর্ঘ আপসহীন লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুধুমাত্র বাঙালি জাতির পিতাই হয়ে ওঠেননি, বিশ্ব বরেণ্য রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। তার পেছনে থেকে সব ধরনের সাহস যুগিয়েছেন, সহযোগিতার মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তার সহধর্মিণী, এ মহীয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে তার পাশে থেকে মানবকল্যাণ ও রাজনীতির যে শিক্ষা তিনি লাভ করেছেন, তাতে তিনি একজন বিদুষী ও প্রজ্ঞাবান মানুষে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো অনুসরণ করে তার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিলেন বেগম মুজিব। বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয়-দফা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু যখন বার বার পাকিস্তানি শাসকদের হাতে কারাবন্দি ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মী বঙ্গমাতার কাছে ছুটে আসতেন। তিনি তাদের বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা বুঝিয়ে দিতেন এবং লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা যোগাতেন। অর্থনৈতিকভাবেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করতে তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভেঙে না পড়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন দৃঢ়তার সঙ্গে। বিশেষ করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কিছু কুচক্রী মহল স্বাধীনতা সংগ্রামকে বিপন্ন করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছিল, তখন বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির বিপক্ষে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দৃঢ়চেতা অবস্থান বাংলার মুক্তি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করেছিল। তার এই সময়োচিত দৃঢ় অবস্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করেছেন ফজিলাতুন্নেছা। গরিব-এতিম-অসহায় মানুষদের সাহায্য করেছেন, বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা করে তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার মতো মহৎ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ঘাতকচক্রের বুলেটের আঘাতে এ মহীয়সী নারী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে শহীদ হন।
জাতির পিতার আমৃত্যু সঙ্গী, বাংলার মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করবে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযথ মর্যাদায় পালন করার জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০২৩
এসকে/আরআইএস