ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সাইবার নিরাপত্তা আইন করে সরকার নিজেদের রক্ষা করতে চায়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
‘সাইবার নিরাপত্তা আইন করে সরকার নিজেদের রক্ষা করতে চায়’ ছবি: ডি এইচ বাদল

ঢাকা: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যারা মামলা করেছে তাদের ৯০ ভাগ বর্তমান সরকারের দলীয় লোক৷ এ আইনের বিরুদ্ধে যখন সারাদেশের মানুষ, সাংবাদিক ও বিদেশিরা কথা বলছে, তখন সরকার সেটি বাতিল করে একই ধারা রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছে। এসব আইন করে তারা নিজেদের রক্ষা করতে চায়।

বুধবার (৯ আগস্ট) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ সব কালা কানুন বাতিলের দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।  

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নে (ডিইউজে) একাংশ (বিএনপি পন্থী)।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা আরো বলেন, গত ১৫ বছরে এ সরকার (আওয়ামী লীগ) সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। নানা কালা কানুন করে মানুষের কণ্ঠস্বর রোধ করেছে, সাংবাদিকদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। সাংবাদিকদের দিয়ে মামলা ও জেলখানার ঘানি টানাচ্ছে৷ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন যে আইনটি করেছে সেটি তাদের প্রতারণা। এমন তামাশার জন্য আইনমন্ত্রীর বিচার চাই। এ প্রহসন বাদ না দিলে আমরা আইন মন্ত্রণালয়, এমনকি গণভবন ঘেরাও করতে বাধ্য হবো।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইসিটি অ্যাক্ট তৈরি করলেন। নিজেদের সমস্ত দুর্নীতি এবং অপকর্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা এ আইন করলেন। পরে দেখলেন, এর বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করে৷ তাই পরে আরও ভয়াবহ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে এলেন। তখন সারাদেশের মানুষ, সাংবাদিক, জজ এ আইনের বিরোধিতা করতে শুরু করলেন৷ যত বিদেশি সংস্থা, প্রতিনিধি আছে, সবাই এর বিরুদ্ধে কথা বলেছে। এভাবে যখন আর এ আইনকে রক্ষা করা যাচ্ছে না, তখন তারা নতুন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন আনলেন৷ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সব ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে সংযোজন করলেন। উপর্যুপরি সাংবাদিকদের জন্য ২৫ লাখ টাকা জরিমানার ব্যবস্থা করলেন।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যারা মামলা করেছে তাদের ৯০ ভাগ এ সরকারের দলীয় লোক। তার মানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে তারা নিজেদের রক্ষা করতে চায়।

ডিইউজের একাংশের বর্তামান সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তার পাশে কোনো চোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলার নিউজ করতে গেলে আপনাদের (সাংবাদিক) ১০ বার ভাবতে হবে। আপনারা যদি রিপোর্টে লেখেন চোরকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, চোরের মা গিয়ে আদালতে মানহানির মামলা করতে পারে৷ এটি প্রমাণ করতে পারলে আপনার ২৫ লাখ টাকা জরিমানা। এ আইনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। এ আইন সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করা জন্য, চোর-লুটেরাদের বাঁচাবার জন্য, রাতের ভোটের সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, সরকার বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নাকি তারা বাতিল করছে৷ তার পরিবর্তে নতুন একটি আইন নিয়ে আসছে। সেটির নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন। এ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশের সাংবাদিক সমাজ এবং নিপীড়িত, নির্যাতিত বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ওপর যে জেল, জুলুম নিপীড়ন চলছে, সেটি বন্ধ হবে না। তারা এটি করেছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশিদের যে চাপ আছে, তাদের দেখানোর জন্য। এটি এক ধরনের ভেল্কিবাজি, প্রতারণা ও অন্যায়।

ডিইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা একটি কালা কানুনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি। এটি আমাদের জন্য নতুন নয়। গত ১৫ বছরে ধরে আমরা এ ধরনের কালা কানুন, সাংবাদিক নির্যাতন, গুম, খুন ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় আছি।

তিনি আরও বলেন, আজকে যে আইনের বিরুদ্ধে আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি, সেই আইনটি ছিল প্রথমে আইসিটি অ্যাক্ট। আমরা সেটির প্রতিবাদ করা পর তারা সেটি থেকে দূরে গিয়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করলো৷ এটি আইসিটি অ্যাক্টের চেয়েও ভয়ংকর আইন। এ আইনের বিরুদ্ধে যখন বিশ্ব জনমত গড়ে উঠেছে, তখন তারা নাম পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করলেন। যেখানে সব ধরনের নিপীড়নমূলক ধারাগুলো রেখে দিলেন। এ আইনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের সঙ্গে চরম মিথ্যাচার করেছেন। জাতির সঙ্গে প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

তিনি বলেন, গত ৫২ বছরে এটি প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। তারা বরাবরই যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনই মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করেছে৷ এবং সংবাদপত্র দমন করেছে, বন্ধ করেছে। আজ আমরা এ আইন বাতিল ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে আসিনি। কারণ এ দাবি তাদের (সরকার) জানিয়ে কোনো লাভ নেই৷ আজ আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের দাবিতে৷ আমাদের দাবি একটিই, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, নির্যাতন বন্ধ করুন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, ডিইউজের একাংশের সহ-সভাপতি রাশেদুল হক, রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, ডিইউজের একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম, দপ্তর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, কল্যাণ সম্পাদক সালাউদ্দিন রাজ্জাক ও কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।