ঢাকা, সোমবার, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নির্বাচনী প্রচারণা টার্গেট, অক্টোবরের মধ্যেই ৯ মেগাপ্রকল্পের উদ্বোধন

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩
নির্বাচনী প্রচারণা টার্গেট, অক্টোবরের মধ্যেই ৯ মেগাপ্রকল্পের উদ্বোধন

ঢাকা: অনুন্নত বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ বানানোর স্বপ্ন নিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলো শেখ হাসিনার সরকার। পরবর্তীতে মধ্যম আয়ের দেশকে উন্নত দেশে নিয়ে যেতে ঘোষণা করা হয়েছে রূপকল্প-২০৪১

উন্নত দেশে পরিণত করতে লাগবে উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো, এ চিন্তা থেকেই সরকার হাতে নেয় বিলিয়ন ডলারের এক ডজন মেগাপ্রকল্প।

এর মধ্যে বহুল কাঙ্খিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেছে।   আর আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে মেট্রোরেল। বাস র‍্যাপিড ট্রানজিটসহ আরও কয়েকটি প্রকল্প খুলবে অল্প সময়ের মধ্যেই। উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে সড়ক, সেতু, রেল ও বিমানের ৯ মেগাপ্রকল্প।

১.খুলনা-মংলা রেল প্রকল্প, ২. পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প, ৩. কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প, ৪. আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্প ৫. মেট্রোরেল প্রকল্প, ৬. ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প  ৭. পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে ৮.  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্যানেল ৯.  শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল

রেলওয়ের চার প্রকল্পের দুইটি সেপ্টেম্বর আর দুটির উদ্বোধন অক্টোবরে

রেলের চার প্রকল্পের উদ্বোধনের বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে চার প্রকল্প উদ্বোধন করতে কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প: দক্ষিণ - পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলার অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এক মাস পরে সেপ্টেম্বরেই প্রকল্পের উদ্বোধনের জন্য ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

প্রকল্প সূত্র মতে,  মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ শতাংশ। আর ঢাকা-মাওয়া অংশের অগ্রগতি হয়েছে ৭৯ ভাগ। ভাঙ্গা যশোর পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ, এই অংশের উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। পদ্মা সেতু রেল সংযোগের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

রেলপথ মন্ত্রী বলেন , সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পের  ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চাওয়া হবে। তিনি ২০  সেপ্টেম্বরের পরে যেদিন সময় দেবেন সেদিন উদ্বোধন হবে।

কক্সবাজার রেল সংযোগ প্রকল্প: ঢাকা থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজারের সরাসরি রেল যোগাযোগ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এ লক্ষ্যে  চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়ে গেছে। বাকি আছে ১২ কিলোমিটার। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ। রেলওয়ে মন্ত্রণালয় আগে সেপ্টেম্বরের কথা বললেও কালুরঘাট সেতু সংস্কার ও বান্দরবানের পাহাড়ি ঢলে রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই প্রকল্পের উদ্বোধন পিছিয়ে যাচ্ছে।  

কক্সবাজার-দোহাজারী নিয়ে রেলমন্ত্রী বলেন, তারা প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আপডেট নেওয়া হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশ ঠিক করা হবে। এরপর উদ্বোধন করার কথা ভাবা হবে।

আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্প: অবশেষে আলোর মুখ দেখছে আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন। ভারতীয় ঋণে বাস্তবায়িত হচ্ছে এ প্রকল্প সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় নরেন্দ্র মোদি সাথে যৌথভাবে এ রেললাইন উদ্বোধন করতে পারেন।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আখাউড়া-আগরতলা প্রকল্পের কাজ ৯০ ভাগের বেশি হয়েছে। রেললাইন বসানোর কাজ পুরো শেষ।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এরপর ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এ প্রকল্প চতুর্থবারের মতো মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হচ্ছে। অর্থাৎ ১৩ বছর ধরে চলা এ প্রকল্প অবশেষে আলোর মুখ দেখছে।

এ প্রকল্পের মোট ব্যয় হচ্ছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

খুলনা-মোংলা রেললাইন: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর হলেও মোংলা বন্দর এতোদিন ছিলো রেল সংযোগের বাইরে। এজন্য খুলনা থেকে মংলায় রেলপথ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয় । নানা জটিলতায় কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে অবশেষে এবার নির্মাণকাজ শেষের পথে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, আগস্ট মাসে এ প্রকল্পের ৯৯ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।   শেষ মুহূর্তের ফিনিশিং কিছু কাজ বাকি আছে স্টেশনগুলোর। এ প্রকল্পটি ২০১০ সালে একনেক সভায় অনুমোদন হওয়ার ১৩ বছর পরে এসে আলোর মুখ দেখছে।

খুলনা-মোংলা ও আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নিয়ে মন্ত্রী বলেন,  প্রধানমন্ত্রী জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে ভারত সফরের সময় আলাদা সময় বের করে  উদ্বোধন করা হবে।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ৪ মেগাপ্রকল্প

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও হয়ে ফার্মগেট- কোথাও নেই সিগন্যাল, নেই যানজট। যানজটের নগরী ঢাকায় এটা এক কষ্টকল্পনা কিন্তু মাত্র ১২ মিনিটে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন সফল হচ্ছে এবার। সেপ্টেম্বরেই ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এ সুবিধা পাবে নগরবাসী। প্রথমাংশের কাজ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম এস আকতার বাংলানিউজকে বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ তিনটি ধাপে সম্পন্ন করা হচ্ছে। প্রথম অংশের বনানী পর্যন্ত ৯৮ শতাংশ ও বনানী থেকে মগবাজার অংশে ৫৪ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনে প্রস্তুত।

মেট্রোরেল লাইন-৬ : দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এরইমধ্যে মেট্রোরেল নিয়মিত চলাচল করছে। আর অক্টোবরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশটিও। এরইমধ্যে এ অংশে শুরু হয়েছে পরীক্ষামূলক চলাচল।  

উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে আর অপেক্ষা করতে হবে না দেড় থেকে দুই ঘন্টা। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকাবাসী এ পথ মেট্রোরেলে পাড়ি দিবে মাত্র ৩৮ মিনিট।

কর্ণফুলী টানেল : চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের মূল কাজ শেষ। এ প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অক্টোবরে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে টানেলের যুগে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ।

এ প্রকল্প সমাপ্ত হলে দেশের যোগাযোগব্যবস্থার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে মনে করেন সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন।

পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে: বাংলাদেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করতে যাচ্ছে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে। রাজধানীর বুকে এই ১২ দশমিক ৩ শূন্য কিলোমিটার দীর্ঘ ১২ লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে নতুন শহর পূর্বাচলের সাথে যুক্ত হবে নগরীর বাকি অংশ। একইসাথে   যানজট কমিয়ে ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করবে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ, অপেক্ষা কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক  উদ্বোধনের জন্যে।

দৃষ্টিনন্দন এই এক্সপ্রেসওয়ের সাথে উভয় পাশে, কুড়িল থেকে বালু নদী পর্যন্ত ১০০ ফুট চওড়া খাল খননও করা হচ্ছে। ফলে শুধু যানজট নয় বসুন্ধরা, খিলক্ষেত এলাকার জলাবদ্ধতাও নিরসন করবে।

সরকারি অর্থায়নে নির্মিত এ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১০ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের ৮ বছর পরে প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে।

উদ্বোধনের অপেক্ষায় দেশের আকাশ যাত্রার সর্ববৃহৎ প্রকল্প

বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল : ৭ অক্টোবরে চালু হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবনও এখন দৃশ্যমান। চলছে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জার কাজ। আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে বাড়বে উড়োজাহাজ চলাচল ও যাত্রীসেবার মান। এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে এর মাধ্যমে উন্নয়নশীল বাংলাদেশের সংকেত বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে যাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ  বলেন, এ প্রকল্পগুলো নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে না। এতে করে সময় বাড়ে, বরাদ্দ বাড়ে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রাস্তা বাংলাদেশে। এই ঋণের টাকা বাংলাদেশের মানুষকেই শোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৩

এমএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।