ঢাকা, শনিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১১ মে ২০২৪, ০২ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছি’

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
‘স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছি’ মাহবুবা পারভীন

সাভার (ঢাকা): ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। ২০০৪ সালের এই দিনে ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও আহত হয় আরও কয়েকশত নেতাকর্মী।

সেই গ্রেনেড হামলায় শরীরে প্রায় ১৮০০ স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে ফেরা আহত সাভারের মাহবুবা পারভীন তেমনি একজন।

১৯ বছর অতিবাহিত হলেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সেই ভয়াবহ দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি মাহবুবা পারভীন। সেদিন পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বৃহত্তর ঢাকা জেলার সেচ্ছাসেবক লীগের নেত্রী হিসেবে সাভার থেকে সেই সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে যোগ দেন তিনি। গ্রেনেড হামলার বিকট শব্দে অচেতন হয়ে পড়েন পারভীন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তার জ্ঞান ফেরে। শরীরে এখনো গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে প্রতিদিনিই সেই ভয়াল হামলার দুঃসহ স্মৃতি ও আতঙ্ক বয়ে বেড়ান তিনি।

রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে সাভারের ব্যাংক কলোনিতে মাহবুবা পারভীনের নিজ বাসায় তার শারীরিক অবস্থার বিষয়টি জানতে গেলে তিনি ভালো নেই বলে জানান।

তিনি বলেন, প্রতিরাতে স্প্লিন্টারের জ্বালাপোড়ার কারণে ঘুমাতে পারি না। ২১ আগস্ট আহত হওয়ার পর ৫ বছর হুইল চেয়ার ব্যবহার করেছি। এরপর ৭ বছর চলাফেরা করেছি ক্রাচে ভর দিয়ে। নিজের কোনো গাড়ি না থাকায় স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় মধ্যরাতে ছটফট করলেও হাসপাতালে যেতে পারছি না। স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় ধুঁকে ধুঁকে মরে যাচ্ছি।  

তৎকালীন ঢাকা জেলা বৃহত্তরের স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবা পারভীন এখন ঢাকা জেলা (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনি স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন।

মাহবুবা পারভীন বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবসময় আমার পাশে ছিলেন, আছেন। আহত হওয়ার পর থেকে তিনি প্রতি মাসে আমাকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছেন। এরআগে ১০ লাখ করে ২ বারে মোট ২০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটও দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মূল্যায়ন করলেও সাভারে আমার কোনো মূল্যায়ন হয়নি। আমার জন্মস্থান এই সাভারে দলীয় কর্মসূচিতে আমাকে চেয়ার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। কর্মসূচিতে আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না স্থানীয় শীর্ষ নেতারা।

সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে মাহবুবা পারভীন বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে র্শীষ নেতাদের বক্তব্য শেষে প্রাণ প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা আপা বক্তব্য দেন। বক্তব্যের শেষ দিকে জয় বাংলা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দ হয়। আমি শুধু আমার চারপাশ অন্ধকার দেখতে পাই। একসময় দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যাই। বাম পা ও বাম হাত শিরশির করার একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

মাহবুবা বলেন, অনেকে ভেবেছিলেন আমি মরে গেছি। পরে আমাকে দেশে ও ভারতে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসার সময় যখন ইঞ্জেকশন দেওয়া হতো ছটফট করতাম, চিৎকার করতাম। মনে হতো জিহ্বার নিচ থেকে আগুন বের হচ্ছে। ২২ দিন পর পা ও হাতের অনুভূতি ফিরে পেলেও কাউকেই চিনতে পারতাম না। ২৫ দিনের দিন আমি আশপাশের লোকদের চিনতে পারি। এখন আমার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যাতায়াতের জন্য কোনো গাড়ি না থাকায় ভীষণ কষ্ট করতে হচ্ছে। সাভারের শীর্ষ নেতারা চাইলেই আমার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

রাজনীতিতে হাইব্রিড নেতাকর্মীদের কারণে তৃণমূলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত হচ্ছে বলে দাবি করে মাহবুবা পারভীন বলেন, দলের দুঃসময়ে যখন আমরা রাজনীতি করেছি তখন আমাদের রাজনীতি ছিল দলের জন্য প্রয়োজনে নিজের রক্ত দিয়ে দেওয়া। বিরোধী দলে থাকাকালীন সরকারি দলের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আগে ত্যাগের রাজনীতি ছিল এখন ভোগের রাজনীতি হচ্ছে। হাইব্রিডরা আজ দলীয় কর্মসূচিতে চেয়ার পাচ্ছে। ত্যাগীরা হচ্ছে বঞ্চিত।

শরীরে ১ হাজার ৭৯৭টি স্প্লিন্টার বয়ে বেড়ানো মাহবুবা বলেন, দিনের বেলা স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা অনেকটা কম থাকলেও রাতের বেলায় যন্ত্রণা বেড়ে যায়। মৃত্যুর আগে আমার প্রত্যাশা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ের বাস্তবায়ন দেখে যাওয়া। এটিই হবে আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০২৩
এসএফ/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।