ঢাকা: দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের ফেরিঘাটে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। যশোর-খুলনা-ঝিনাইদহ থেকে মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টায় রাজধানীর সায়েদাবাদে পৌঁছে যাচ্ছে এসব রুটের পরিবহন।
তবে সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এমনকি রাজধানীর ভেতরের বিস্তৃত পথ পাড়ি দিয়ে মহাখালী, গুলিস্তান এমনকি শ্যামলীতেও আসছে কয়েকটি রুটের বাস। সন্ধ্যা সাটটা বাজলেই রাজধানীর পান্থপথের রাসেল স্কয়ার মোড়ে হানিফ, সোহাগ পরিবহন, এস আলম, শ্যামলী পরিবহনসহ ২০ থেকে ২৫টি পরিবহন কোম্পানির বাস চলছে।
এসব পরিবহনের অধিকাংশেরই নেই রুট পারমিট। আগে সেসব বাস শ্যামলী থেকে গাবতলী হয়ে দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে যশোর-খুলনা যেত, তারা এখন পদ্মা সেতু হওয়ার পরে রাজধানীর মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। এসব পরিবহন রাজধানীতে ঢোকার ফলে বাড়ছে যানজট, অন্যদিকে রুট পারমিটহীন এসব বাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে বিআরটিএ-এর।
যানজটের শঙ্কায় বন্ধ রুট পারমিট, তবুও চলছে যানবাহন
প্রথমদিকে পদ্মা সেতু হয় কিছু পরিবহনের রুট পারমিট দেওয়া হলেও ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বিআরটিএ-তে চিঠি দেয়। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে আসা পরিবহনগুলোর রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী মিজানুর রহমান বলেন, সিটি করপোরেশন রাজধানীতে কোনো যানজট চায় না। সেই অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আগামী মাসেই সায়দাবাদে নতুন করে টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে। তখন এই সমস্যার সমাধান হবে।
তারপরও রুট পারমিটহীন পরিবহন চলাচল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন এসব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) দেখবে, প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে।
তবে রুট পারমিট ছাড়াই চলা এসব পরিবহন রাজধানীতে দেখেও না দেখার ভান করছে পুলিশ। ফলে বন্ধ হচ্ছে না এসব পরিবহনের দৌরাত্ম্য।
এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে চিঠির পাঠানোর পর রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ আছে। পদ্মা সেতুর কারণে যদি গাবতলী বা মহাখালী থেকে বাস ওই অঞ্চলে চলাচল করে তবে শহরে যানজট বাড়বে।
আর অভিযোগের জবাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার আগেই সায়েদাবাদ থেকে যে বাসগুলো ছেড়ে যেত, সেগুলো এখনো যাচ্ছে। এই বাইরে সায়েদাবাদে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় থেকেই ১২টি কোম্পানির বাস লালবাগ, ফুলবাড়িয়া এই অঞ্চলে থেকে ছেড়ে যেত।
মুনিবুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর অনেকেই রাজারবাগ, মালিবাগ, মতিঝিল অংশে কাউন্টার করতে চেয়েছিল। ডিএমপি থেকে এটি করতে দেওয়া হয়নি। যেসব বাস এখন নগরীর মধ্যে যাতায়াত করছে রুট পারমিট ছাড়া সেগুলোকে ধরা হচ্ছে। অনেক সময় বাসগুলো চালাকি করে প্রধান সড়ক এড়িয়ে চলে।
কথা রাখেনি মালিক সমিতি
রুট পারমিট ছাড়া পদ্মা সেতু দিয়ে কোনো বাস চলাচল করতে পারবে না বলে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। ২০২২ সালের ২৮ জুন এক চিঠিতে দক্ষিণাঞ্চলের সব মালিক সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এনায়েত উল্যাহ বলছেন, যারা রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
আর্থিক ক্ষতিতে বিআরটিএ
রুট পারমিট বন্ধ থাকায় বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিআরটিএ থেকে জানা যায়, রুট পারমিট ফি স্টেজ ক্যারেজের (বাস-মিনিবাস) ক্ষেত্রে এক জেলার জন্য প্রতি বছর ৫৭৫ টাকা, একাধিক কিন্তু অনধিক তিন জেলার জন্য ৯২০ টাকা এবং তিনের অধিক জেলার জন্য ১২৯০ টাকা।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত হাজারের ওপরে বাসের আবেদন জমা আছে। তবে সেগুলোকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে বিআরটিএ অনুমতি না দিলেও অনেক বাস রুট পারমিট ছাড়াই চলছে।
এই প্রতিবেদক রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখতে পান, সকাল থেকে সারা দিন-রাত শহরের প্রধান সড়কে গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালের বাস সায়েদাবাদ বা হানিফ ফ্লাইওভার পার করে পদ্মা সেতু দিয়ে চলাচল করছে। এক্ষেত্রে উত্তর বঙ্গের ও দক্ষিণ বঙ্গের কিছু জেলার সঙ্গে এখন সরাসরি বাস যোগাযোগ চালু হয়েছে।
বিআরটিএর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, রুট পারমিট ছাড়া চলছে এমন অনেক গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই সরকার দলীয় এক পরিবহন নেতা তার গাড়ির ২৬ হাজার টাকা জরিমানা মওকুফের অনুরোধ করেন।
আর্থিক ক্ষতি রোধে বিআরটিএ কেন ব্যবস্থা নিতে পারছে না এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, অনেক গাড়ি এমন রুট পরিবর্তন করেছে। তবে সেগুলো রাস্তায় ধরা হচ্ছে। বিআরটিএর ম্যাজিস্ট্রেট সংখ্যা মাত্র আট জন। ১০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট হলে এগুলো বিষয় আরও ভালোভাবে দেখা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
এনবি/এসআইএস