ঢাকা: আদিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ।
বুধবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, নিদারুণ সংকট ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীদের জীবন কাটছে। বাংলাদেশের ৫০টিরও বেশি আদিবাসী জনগোষ্ঠী তাদের ভূমি, ভাষা-সংস্কৃতি, জীবিকা ও অস্তিত্ব রক্ষায় এক কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত। যে দেশের জন্ম হয়েছিল শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে ভাষা, সংস্কৃতি আর অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আর সেই দেশে আদিবাসীদের এখন লড়াই করতে হচ্ছে নিজেদের অধিকারের জন্য।
তিনি আরও বলেন, আদিবাসীরা পায়ের নিচে এক খণ্ড জমি, মাথার ওপর উদার আকাশ আর নিজেদের সংস্কৃতি বিকাশের স্বপ্ন দেখে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সমতলের আদিবাসীদের যেমন দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে, তেমনি আছে বঞ্চিত ও প্রতারিত হওয়ার ইতিহাস।
আদিবাসীরা ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, টঙ্ক আন্দোলন, হাজং বিদ্রোহসহ সমস্ত আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদের জমি, সংস্কৃতি রক্ষার আকাঙ্ক্ষা থেকে। প্রতিটি আন্দোলনে তারা সাহসের সঙ্গে লড়েছে, জীবন দিয়ে অধিকার আদায় করতে চেয়েছে।
এইসব আদলনে তারা অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছে যে, রাষ্ট্র শক্তি যেমন তাদের ওপর নিপীড়ন চালায়, তেমনি শোষক, লুটপাটকারি ভূমিদস্যুদেরও পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাই তারা প্রাণপণে চেয়েছিলেন দেশটা স্বাধীন হোক এবং তাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয় যে, স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও তাদেরকে লড়তে হচ্ছে, জীবন দিতে হচ্ছে, বঞ্চিত এবং লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি বিপন্ন, দারিদ্র্য কমছে না, শিক্ষার সুযোগ বাড়ছে না, নাগরিক অধিকার বিপন্ন, পুষ্টিহীনতা ব্যাপক, বেকারত্ব ভয়াবহ, সরকারের ঘোষিত মাথাপিছু আয় এবং আদিবাসীদের আয়ের মধ্যে পার্থক্য বিশাল, দেশের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অঞ্চল বলতে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলকেই বুঝানো হয়। আদিবাসীরা এখনো পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
তাই আদিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
২. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন ও মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে আদিবাসীদের চাকরি ও শিক্ষায় কোটা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্মের তিন সাঁওতাল হত্যা এবং রাজশাহীর গোদাগাড়িতে অবিনাথ মার্ডি ও রবব মার্ডির আত্মহত্যার জন্য দায়ীদের বিচার ও শাস্তি দেওয়া।
৪. আদিবাসীদের ওপর হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জমি দখল, লুটপাট, মিথ্যা মামলাসহ পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা। আদিবাসীদের নামে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ, ভূমি অফিসের ঘুষ-দুর্নীতি-হয়রানি বন্ধ করা।
৫. পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তিন দশক পূর্তি এবং আদিবাসীদের বিভক্তি ও দুর্বল করার চক্রান্তের বিরুদ্ধে আগামী ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগে আদিবাসী সমাবেশ করার ঘোষণা দেন সংগঠনের নেতারা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নরেন চন্দ্র পাহান ও দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্ৰ হেমব্রম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ বগুড়া জেলার সভাপতি সন্তোষ সিং বাবু ও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ নাটোর জেলার সভাপতি রুঘুনাথ এক্কা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২৩
এসসি/এসএম