বরিশাল: বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের ওপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের হামলার ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (০৬ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় বিষয়টি নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. খোরশেদ আলম বলেন, পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে তা দুঃখজনক। যে পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, তার কাছে শিক্ষার্থীরা ক্ষমা চাইবেন। পরবর্তী পর্যায়ে পুলিশও বিষয়টি সফটলি দেখবেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি ঘটেছে ক্যাম্পাসের বাইরে শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজের সামনে। আর এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের মহাসড়ক অবরোধ করার বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সেখানে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলি এবং অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরেও যান। তাদের আহ্বান জানানো হয় তারা যেন জনসাধারণের কথা চিন্তা করে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটান।
এর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম-বিপিএম বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের উপস্থিতিতে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা এখন আহত পুলিশ সদস্যের কাছে যাচ্ছি। তার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি কি হয়েছে জানবো এরপর ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার রুমে অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটনাস্থল থেকে আটক হওয়া তিন ছাত্র ও ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বক্তব্য শোনা হয়। প্রথম দিকে কঠোর অবস্থানে থাকলেও আটক তিন ছাত্রের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পুলিশ কিছুটা কোমল হয়। এক্ষেত্রে হামলার শিকার আহত পুলিশ সদস্যরা ছাত্রদের ক্ষমা করে দিলে বিষয়টি নিয়ে জোড়ালো কোনো পদক্ষেপ নাও নেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে সাধারণ ডায়েরির পরে ঘটনার তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার পর বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের সামনের বান্দরোডে একটি মোটরসাইকেলের গতিরোধ করেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। ওই সময় মোটরসাইকেল ও চালকের বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে না পারায় এবং হেলমেট না পরায় সেটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। নিয়মানুযায়ী মামলা দিয়ে যানবাহনটিকে জব্দ করা হয়। এ ঘটনার কিছুসময় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে আসেন এবং তারা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মনিরুল হাসান ও কনস্টেবল মোস্তফার ওপর ক্ষুব্ধ হন।
মনিরুল হাসান জানান, ঘটনার সময় সেখানে থাকা চার পুলিশ সদস্যকেই হেনস্তা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সার্জেন্টের ওয়ারলেস ও বডি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং কনস্টেবল মোস্তফাকে মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে করা হয়। আর বাকিরা সবাই কমবেশি আহত হন। তাৎক্ষণিক বিষয়টি অন্য পুলিশ সদস্যরা জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে শরীফুল ইসলাম, সোহাগ ও আলভির ইসলাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রকে আটক করে।
আহত কনস্টেবল মোস্তফাও একই কথা জানিয়েছেন।
পরে এ ঘটনার পর পুলিশের হাতে ধরা পড়া শিক্ষার্থীদের সহপাঠীরা রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়ক অবরোধ করেন। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা বললে শিক্ষার্থীরা সরে যায়। ওই সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, বাইকের মামলা দিয়ে আবার শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন সহপাঠীকে ধরে থানায় নেওয়া হয়েছে। আর এর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০২৩
এমএস/এফআর