ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

তারা মানুষের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে টিকটকে ভিডিও দেখাতো: র‌্যাব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
তারা মানুষের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে টিকটকে ভিডিও দেখাতো: র‌্যাব

ঢাকা: প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা, তারপর টার্গেটের বিভিন্ন অঙ্গ ও কব্জি বিচ্ছিন্ন করা; ঘটনাটি ভিডিও রেকর্ড করা, শেষে সেটি আবার টিকটকে প্রকাশ। একটি চক্র বহুদিন ধরে এমন অপকর্ম করে আসছিল।

তাদের গ্রেপ্তার করেছে করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

সম্প্রতি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামে এক যুবকের হাত থেকে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে সে ভিডিও টিকটক প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে একটি চক্র। ঘটনাটির অভিযোগ ও এ অপকাণ্ড আমলে নিয়ে তাদের পেছনে লাগে র‍্যাব-২ ও র‍্যাব-৬। গতকাল শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) থেকে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভোর পর্যন্ত চক্রটিকে ধরতে অভিযান চালায় এ বাহিনী। পরে মোহাম্মদপুর ও বাগেরহাট এলাকা থেকে চক্রের ৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিদ্রের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের অভিযান চলছে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- আহমেদ খান (২২), মো. হাসান ওরফে গুটি হাসান (২৪), মো. হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), মো. রাজু (১৯)। তাদের কাছ থেকে ডাকাতি ও হামলার কাজে ব্যবহৃত দেশিয় ধারালো অস্ত্র পাওয়া যায়। এদের দেওয়া তথ্যে ভিত্তিতে মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩), ও তুষার হাওলাদার (২৩) গ্রেপ্তার হন।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছিল। এদের বিরুদ্ধে হামলা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা হয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়।

সম্প্রতি কতিপয় সন্ত্রাসী মোহাম্মদপুরে আরমান নামে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে। এ দৃশ্য ভিডিওতে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে। এ ঘটনায় গত ২৭ আগস্ট ভুক্তভোগী নিজে বাদি হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা (নং-১৫২) করেন।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন জানান, আসামিরা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে কয়েক বছর ধরে গ্রুপটি পরিচালিত হয়ে আসছিল। তারা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাঁধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়। তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় দেশিয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রমও পরিচালনা করতো।

ওই এলাকাগুলোয় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করতো এরা। এছাড়া মাদক সেবন ও ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিল। গ্রুপের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সাথেও জড়িত।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা আরমানের কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনায় নিজেদের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে তথ্য দিয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আসামি তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাঁ হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে কব্জি বিচ্ছিন্ন করে। রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে ভুক্তভোগী আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এর আগেও তারা বিভিন্ন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করেছে। এসব ঘটনার চিত্র ধারণ করে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিত।

রাফাত কোনো মোবাইল ফোনের সিম ব্যবহার করতেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আইডি খুলে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে তিনি ভুক্তভোগীদের হুমকি দিতেন।

আসামিদের বিষয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাতের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় বিগত ৪-৫ বছর যাবত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালিত হয়ে আসছিল। তিনি বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত, গ্রুপটির প্রধান হিটম্যানও তিনি। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের মাধ্যমে তিনি মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাধ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো।

কব্জি কাটার ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থানের পর আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে বাগেরহাটে যান। সেখান থেকে অন্যত্র আত্মগোপনে যাওয়ার সময় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার তুষার হাওলাদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন অন্যতম সদস্য। রাফাতের নির্দেশনা অনুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতেন তিনি। পরবর্তীতে গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরা তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো। কব্জির ঘটনার পর তিনি রাফাতের সঙ্গে আত্মগোপন করে ও বাগেরহাট থেকে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার আহমেদ খান ওই সন্ত্রাসী গ্রুপের অন্যতম সদস্য। তিনি ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত টার্গেট নির্বাচন করতেন। কব্জি বিচ্ছিন্নেও ঘটনার সময় তিনি রাফাত ও তুষারের সঙ্গে উপস্থিত ছিল। তিনিই আরমানের ওপর হামলা চালান। এ ঘটনার পর তিনি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। গতকাল শুক্রবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় ৪ সহযোগীসহ ডাকাতির পরিকল্পনার সময় তারা গ্রেপ্তার হন। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে

গ্রেপ্তার হাসান ওরফে গুটি হাসান,  হানিফ হোসেন জয়, রমজান ও রাজু এই সন্ত্রাসী গ্রুপের সহযোগী সদস্য। তারা গ্রেপ্তার রাফাতের নেতৃত্বে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো। টার্গেট নির্বাচনের পর পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভুক্তভোগীকে নৃশংসভাবে হামলা করে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করত। রাজধানীর আদাবরসহ বিভিন্ন থানায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও তিনি জানান।

নির্বাচনকে সামনে রেখে মোহাম্মদপুর, আদাবর ও মিরপুর এলাকায় কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসী বাহিনীরা সরব হচ্ছে। এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কি ব্যবস্থা নেবে প্রশ্ন করা হয় খন্দকার আল মঈনকে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের র‍্যাব প্রথম কিশোর গ্যাং কালচার আবিষ্কার করে। আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। পদক্ষেপ নেওয়ার পরও তারা এ সমস্ত কার্যক্রম থেকে অনেকে সরে আসছে না। কিশোর গ্যাং কালচারের সাথে জড়িত ১১০০ সদস্যকে আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি। সারা বাংলাদেশে কিশোর গ্যাং দমনে ও এর সাথে যারা জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে যে সকল আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।