ফরিদপুর: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুরে। আর এ বাড়ির পাশের মহাসড়কের সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) তালাত মাহমুদ শাহানশাহ ও ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম।
সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তারেক মাসুদের ভাই বাবু মাসুদ সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
বাবু মাসুদ বলেন, সকালে হঠাৎ করে দেখছি আমাদের ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুর বাড়ির পাশের ঢাকা-গোপালগঞ্জ মহাসড়কে ‘তারেক মাসুদের বাড়ি’ সম্বলিত লেখা সাইনবোর্ডটি উপড়ে ফেলানো হয়েছে। কেউ শত্রুতা করে সাইনবোর্ডটি উপড়ে ফেলেছে হয়তো।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এ বাড়িটি নিয়ে বেশ ষড়যন্ত্র চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকারের বাড়িটিও এখন নিরাপদ মনে হচ্ছে না। প্রশাসন ও সরকারের কাছে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে বাড়িটি দ্রুত সংরক্ষণে ও নিরাপত্তা দিতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
এব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমি মৌখিকভাবে শুনেছি। শোনার পরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিম উদ্দিন একটি ট্রেনিংয়ে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ভাঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, তারেক মাসুদ আমাদের দেশের সম্পদ। তার নাম ও বাড়ির নাম লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ড ভেঙে কিংবা উপড়ে ফেলা বড় দুঃখজনক। এব্যাপারে দ্রুত খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরই তিনি চলচ্চিত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। দেশে তিনিই প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আন্দোলনের সূচনা করেন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা নামক স্থানে বিপরীতমুখী ‘চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেসের’ একটি বাসের সঙ্গে তারেক মাসুদ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীরকে বহনকারী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। ঘটনার সময় তারা ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিং লোকেশন দেখে ঢাকায় ফিরছিলেন। ‘মুক্তির গান’, ‘মাটির ময়না’, ‘আদম সুরত’, ‘রানওয়ে’সহ বেশ কিছু সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন তারেক মাসুদ।
তারেক মাসুদ ভাঙ্গার নূরপুর গ্রামের মসিউর রহমান মাসুদ-নূরুন্নাহার দম্পতির ছেলে। তার বাবা ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই (তারেক) সবার বড়।
শৈশবে স্থানীয় একটি মাদরাসায় কিছু দিন লেখাপড়া করেছেন তারেক মাসুদ। এরপর তিনি ভাঙ্গা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় চলে যান। সেখানে নটরডেম কলেজ ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়াশোনা শেষে পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩
এসএম