ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভেঙে পড়া ব্রিজের দায় নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ, দুর্ভোগ চরমে! 

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
ভেঙে পড়া ব্রিজের দায় নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ, দুর্ভোগ চরমে! 

সাতক্ষীরা: ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ও শোভনালী ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া-বাঁকড়ার সংযোগস্থলে মরিচ্চাপ নদীর ওপর ৫৪ লাখ ৪ হাজার ৬৫০ টাকা ব্যয়ে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট ‘বেউলা ব্রিজ’ নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

ব্রিজটির নির্মাণ শেষ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই মরতে বসা মরিচ্চাপ নদী খননের উদ্যোগ নেয় সরকার।

খননের পর নদীর প্রস্থ ব্রিজটির তিনগুণ বাড়ে। ফলশ্রুতিতে ১৬০-১৮০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট নদীর মধ্যে ৬০ ফুটের ব্রিজটি বড্ড অসহায়ত্বের সঙ্গে দিনানিপাত করতে থাকে। টিকে থাকার নিরন্তর সংগ্রাম করেও মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি ব্রিজটি। একপর্যায়ে মাঝ বরাবর ভেঙে পড়ে। তাও প্রায় দুই বছর আগের কথা। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। তারা মাত্র ৬০ ফুটের দৈর্ঘ্যের ব্রিজ নির্মাণ করে নদীটি হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরে নদী খনন হওয়ায় উলটো ব্রিজটির মৃত্যু হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বাকড়া, শরাফপুর, কামালকাটি, বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া, হাজিডাঙ্গা, শ্বেতপুর, বেউলা, পদ্ম বেউলা, নৈকাটি, পাইথালী ও চিলেডাংগা গ্রামসহ সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার হাজারো মানুষ ব্রিজটি দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু এখন তা মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, যাত্রীবাহী ইজিবাইক, ইঞ্জিনভ্যানসহ পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল করতে না পারায় সব ধরনের পরিবহনকে এখন চলাচল করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে। ফলে যেমন বেড়েছে পণ্য পরিবহন খরচ তেমনি বেড়েছে জীবনের ঝুঁকি। বিশেষ করে হঠাৎ অসুস্থ হওয়া কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে উপজেলা হাসপাতালে পৌঁছাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে।

এদিকে দাপ্তরিক জটিলতায় ব্রিজটি সংস্কার বা পুনর্নির্মাণে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ব্রিজটির দায় নিতে চাচ্ছে না স্বয়ং নির্মাণকারী সংস্থা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরও। আবার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরও (এলজিইডি) দায়িত্ব নিচ্ছে না ব্রিজটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নির্মাণ করেছে বলে।  

এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, ব্রিজটি নির্মাণ করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এজন্য আমাদের করার কিছু নেই।

অপরদিকে আশাশুনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সোহাগ খান বাংলানিউজকে বলেন, ব্রিজটি আমাদের অধিদপ্তর নির্মাণ করলেও এখন দুই পাশে এলজিইডি রাস্তা করার কারণে এটার দায়-দায়িত্ব এলজিইডির।

ব্রিজ ভেঙে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী খনন করার কারণে ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে।

শরাফপুর গ্রামের শোয়েব আক্তার বলেন, অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণে ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে। ভেঙে পড়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। আর ব্রিজের যা অবস্থা তাতে পুনর্নির্মাণ ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের ভাবতে অবাক লাগে যে, দপ্তরগুলোতে কারা বসে? কারা পরিকল্পনা করে? এত বড় নদীর মধ্যে এতটুকু ব্রিজ নির্মাণ করে নদী হত্যার পরিকল্পনাই বা পাস হয় কীভাবে? এখন ভেঙে পড়েছে, দায় নেওয়ার লোক নেই, সংস্কারের উদ্যোগ নেই। ব্রিজটি অবিলম্বে পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। এজন্য সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. রুহুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।  

বাকড়া গ্রামের আলমগীর সর্দার বলেন, ব্রিজটি নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই। উৎপাদিত ফসল বা ব্যবসার মালামাল কোনো কিছুই ভেঙে পড়া ব্রিজ দিয়ে পার করা যায় না। ব্রিজের কাছে এসে মালামাল নামিয়ে খালি ভ্যান পার করে মাথায় করে মালামাল পার করতে হয়। এর চেয়ে দুর্ভোগ আর হতে পারে না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। তারা দেখেও না, শোনেও না।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রনি আলম নুর বলেন, উভয় দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জনদুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।