ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শহরে চাপ কমাতে উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণের পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০২৩
শহরে চাপ কমাতে উপজেলা পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণের পরামর্শ

ঢাকা: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সাধারণ মানুষের সবসবাসের জন্য শহর কেন্দ্রিক চাপ কমাতে উপজেলা বা গ্রাম পর্যায়ে বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে।

তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে। সবাই মিলে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে মনে করেন তারা।

সোমবার (০২ অক্টোবর) সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৩  উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি’। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার তিনি অংশ নিতে পারেন নি।  

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলি শামীম আখতার, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিয়া।

বক্তারা বলেন, আমাদের আজকের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো স্থিতিশীল নগর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারে টেকসই নগরসমূহই চালিকাশক্তি। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক হচ্ছে। ফলে অর্থনীতিও এই দুই শহর কেন্দ্রিক। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। কারণ শহর হচ্ছে সবার মূল আকর্ষণের জায়গা। এখানে কর্মসংস্থানসহ নানান সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়।  

তারা আরো বলেন, এর থেকে পরিত্রাণ পেতে ঢাকা শহরের চারপাশে স্যাটেলাইট শহর তৈরি করতে হবে। সেই স্যাটেলাইট শহরগুলোর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তাহলে মূল শহরের ওপর চাপ কমে যাবে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো বাড়বে।  আর একটি বিষয় হলো বিশেষায়িত নগরায়ণ করতে হবে। কোন একটি কাজের জন্য কোন একটি নগরের বিশেষত থাকবে। আমাদের সে ধরনের নগর ব্যবস্থায় যেতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয় উপার্জন এই তিন টি বিষয়ের জন্য আলাদা জেলা নির্বাচন করে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তাহলে আমাদের নগর অর্থনীতি উন্নতি করবে একই সঙ্গে ঢাকার ওপর চাপ কমবে।  

বক্তারা বলেন, শহরগুলোকে টেকসই রেজিলেন্টস হিসেবে তৈরি করতে হবে। বিল্ডিং তৈরিতে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। পানির ব্যবহারে আরো স্মার্ট হতে হবে। বৃষ্টির পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে৷ ভূমিকম্পসহনীয় বিল্ডিং তৈরি করতে হবে। সহজ কথায় একটি স্মার্ট ও স্বাস্থ্যসম্মত শহর তৈরি করতে হবে।  

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের জন্য সামর্থের মধ্যে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হলে গ্রামে বা উপজেলা পর্যায়ে কিছু আবাসিক এলাকা তৈরি করতে হবে। এতে করে প্রধানমন্ত্রীর যে প্রতিপাদ্য গ্রাম হবে শহর সেটা বাস্তবায়ন হবে। এসব আবাসিক এলাকায় হাইরেঞ্জ বিল্ডিং করে সাধারণ মানুষ সেখানে উঠবে। আমরা সবাইকে তো প্লট দিতে পারবো না। এজন্য এপার্টমেন্ট করে দিতে হবে। সেসব স্থানে বসবাসের জন্য মানুষকে উৎসাহী করতে হবে।  

তিনি বলেন, শুধু সাধারণ মানুষের সবসবাসের কথা চিন্তা করলে হবে না পরিবেশের কথা মাথায় রাখতে হবে। উন্নত সুয়ারেজ সিস্টেমের ব্যবস্থা করতে হবে৷ বিশ্বের সবদেশেই সে রকম ব্যবস্থা রয়েছে। আমাদের ঢাকা, চট্টগ্রাম অনেক বড় হয়েছে। রাজউক ও গৃহায়ণ কৃর্তৃপক্ষকে অনেক চিন্তা করে হাউজিং প্রকল্প নিতে হবে। তাদের অনেক কাজ আছে। সবাই মিলে ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করলে সকলের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।

মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকে বিশ্ব বসতি দিবস৷ এই বসতির মানে কি? সকলকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা৷ তবে সেটা স্বাস্থ্য সম্মত বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। অস্বাস্থ্যকর বাসস্তান দিয়ে কোন লাভ হবে না। এ বিষয় গুলো আমাদের দেখতে হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মর্ট নাগরিক, সমাজ, প্রযুক্তি বান্ধব জনগোষ্ঠী,সুশাসন নিশ্চিত করা আবশ্যক। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। পরিকল্পিত আবাসন, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ পরিবেশ বান্ধব আবাসন খুবই জরুরি।  

রাজউক চেয়ারম্যান মো: আনিছুর রহমান মিয়া বলেন, রাজউকের কাজের গতি বাড়াতে হবে। আমাদের একটি অবস্থানে যেতে হবে। যাতে স্বাস্থ্যসম্মত একটি আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারি। বিল্ডিং এর সাথে মানুষের টিকে থাকার বিষয়টি নির্ভর করছে পরিবেশের উপর। সুতরাং নগর ও নাগরিকের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে জলবায়ুকে সহায়তা করতে নতুন শহরগুলোকে বনাঞ্চল রক্ষা করতে হবে৷ 

বিশ্ব বসতি দিবসে এগিয়ে যেতে হবে নতুন আঙ্গিকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শহর ও গ্রামের দূরত্ব কমাতে হবে। যাতে শহরের ওপর চাপ কমে। পাশাপাশি আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যাগুলোকে চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে নগর অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। আমি রাউকের পক্ষ থেকে এবিষয়টি অঙ্গিাার করে যাচ্ছি। আগামীতে আমরা পরিকল্পিত নগরায়নের মাধ্যমে পরিবেশ ঠিক রেখে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবো।  

আলোচনায় অংশ নেন প্রধান স্থপতি মনজুরুল রহমান, হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আশরাফুল আলম, আবাসন অধিদপ্তরের পরিচালক শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া। সভায় মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নগর পরিকল্পনাবিদ খুরশিদ জামিল চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২,২০২৩
জিসিজি/এমএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।