খুলনা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা রেল সেতু উদ্বোধন করেছেন। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ডিজিটাল সুইচ টিপে তিনি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন।
সাধারণ মানুষ ভোগান্তিবিহীন আর স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে রেল সেতুর ওপর দিয়ে। অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় ট্রেন যাত্রা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ খুলে যাওয়ায় মানুষ এখন নিরাপদ ও সাশ্রয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবে।
খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মো. মফিদুল ইসলাম টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালু হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। এই ট্রেন চালুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনীতিতে আরও গতি সঞ্চার হবে। এ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য সাশ্রয়ীভাবে মালবাহী ট্রেনে বহন করে ঢাকায় নেওয়া সম্ভব হবে। এতে চাষিরা যেমন লাভবান হবেন, তেমনই রাজধানীবাসীও সস্তায় পণ্য কিনতে পারবেন। এছাড়া সড়ক পথে যানজট অনেকটা কমবে। অনেক চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসাপ্রত্যাশীরা সহজে স্বল্প খরচে ঢাকায় যাওয়া-আসা করতে পারবেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে একইসঙ্গে গাড়ি ও ট্রেনে আসা-যাওয়ার সুযোগ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় প্রাপ্তি নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত ছিল। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক চেষ্টায় তার অবসান হচ্ছে।
সরকারি বিএল কলেজের শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, অধিকাংশ শুক্রবার রাজধানীতে আমাদের চাকরির পরীক্ষা থাকে। ট্রেনে তুলনামূলক ভাড়া কম থাকলেও দীর্ঘ সময় লাগার কারণে আমরা রেলপথে যেতে পারি না। পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় দক্ষিণবঙ্গে আমরা যারা পড়াশোনা করি তাদের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচন হলো। স্বল্প সময়ে আমরা ঢাকাতে গিয়ে পরীক্ষা বা অন্যান্য কাজ শেষ করে আবার একই দিনে ফিরতে পারবো।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে নতুন স্বপ্ন নিয়ে পদ্মা সেতু চালু হয়েছিল। আর রেলসেতু চালুর মধ্য দিয়ে তা পূর্ণাঙ্গতা পেল। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে।
অপরদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু-রাজবাড়ী রুটে একটি কমিউটার ট্রেন চালানোর কথাও ভাবছে রেলওয়ে।
ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস বর্তমান রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা, ঢাকা-কলকাতা রুটের আন্তর্জাতিক ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসও রুট পরিবর্তন করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে। খুলনা থেকে গোয়ালন্দ রুটে চলাচলকারী মেইল ট্রেন নকশিকাঁথা এক্সপ্রেসের চলাচলের রুট বাড়িয়ে ভাঙ্গা হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পুরো রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর দিয়ে ট্রেন খুলনায় যেতে পারবে। একইভাবে রাজবাড়ী হয়ে উত্তরবঙ্গের পথেও ট্রেন চলতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২৩
এমআরএম/এএটি