ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, বিবেচনায় সামনে নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, বিবেচনায় সামনে নির্বাচন

ঢাকা: শুরু হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিবারের মতো এবারও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সমন্বয়ে দুর্গাপূজায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল অপতৎপরতা চালাতে পারে বিষয়টি মাথায় রেখেই এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে বাড়তি তৎপরতার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পূজার প্রথম দিন শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে বিসর্জন মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) পর্যন্ত পাঁচদিন দেশজুড়ে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ মন্দির বিবেচনায় তালিকা করে প্রতিটি মণ্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়।

এছাড়া, প্রতিটি মণ্ডপে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন, টহলে থাকবে র‌্যাব-পুলিশের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালে কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ রেখে যায় এক যুবক। এর জেরে ওই মণ্ডপের পর ওই মণ্ডপসহ নগরীর আরও কয়েকটি মণ্ডপে ভাঙচুর চালানো হয়। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুরের বিভিন্ন স্থানে।

এছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এবারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত। দুর্গাপূজার সময় কোনো মহলের উদ্দেশ্যমূলকভাবে নাশকতা ঘটানোর শঙ্কার বিষয়টিও মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। যেকোন গুজব প্রতিরোধে নজর রাখা হচ্ছে সাইবার স্পেসেও।

এরপরেও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র‌্যাবের হেলিকপ্টারসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিগুলোর প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে পুরো এলাকা সুইপিং করবে ডগ স্কোয়াড ইউনিট।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রত্যেকটি ইউনিট সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এর বাইরে মন্দিরের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবীদেরও সার্বক্ষণিক তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। যে কোনো অসঙ্গতি দেখলে তাৎক্ষণিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এবারের দুর্গোৎসব ঘিরে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি বা হামলার তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তারপরও শান্তিপূর্ণভাবে পূজা সম্পন্ন করতে শতভাগ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। এর ফলে সবাই আশা করছেন, নির্বিঘ্নেই এ আয়োজন সম্পন্ন হবে।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিট মিলে সারাদেশের সব পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। মণ্ডপে আনসার থাকবে, পুলিশ থাকবে টহলে। স্বেচ্ছাসেবকরা সন্দেহজনক কিছু দেখলে পুলিশ-র‌্যাবকে ফোন করে জানাবেন। যেসব এলাকায় আগে প্রতিমা ভাঙচুর বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে এবং যেসব মণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ত্রুটি আছে, সেসব স্থানে বাড়তি নজর রাখা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নজরদারি চলছে, যেন কেউ গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করতে না পারে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, পূজা কমিটি ও মণ্ডপের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে র‌্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়ন। সাদা পোশাকে মাঠপর্যায়ে নজরদারির পাশাপাশি তৎপরতা রয়েছে সাইবার স্পেসেও। মণ্ডপকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় থাকবে স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স।

দুর্গাপূজায় ডিএমপির ২২ নির্দেশনা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

ডিএমপি জানায়, বিগত শারদীয় দুর্গোৎসবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ডিএমপি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

পূজার দিনগুলোতে প্রত্যেক মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ ও আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশি টহল বাড়ানোসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

নির্দেশনাগুলো হচ্ছে-

১. প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে রাতে ভিডিও ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

২. প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও আর্মড ব্যান্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা স্থানীয় থানায় প্রেরণ করা ও থানার অফিসারের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্রিফিং করার ব্যবস্থা করা।

৩. প্রবেশ ও বের হওয়ার গেট মজবুতভাবে স্থাপন, যেসব মণ্ডপে সীমানা দেয়াল নেই সেসব ক্ষেত্রে বাঁশের শক্ত বেড়া নির্মাণ এবং নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক প্রবেশ গেটের ব্যবস্থা করা।

৪. স্থানীয় কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা এবং তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

৫. সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা করা।

৬. প্রতিটি পূজামণ্ডপে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন এবং গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।

৭. বৈদ্যুতিক কাজে নিম্নমানের তার ব্যবহার না করা।

৮. অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পূজামণ্ডপে মোমবাতি/আগরবাতি/আরতির সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।

৯. আনন্দ উৎসবে মাদকের ব্যবহার, জুয়া খেলা ও আতশবাজি বন্ধ রাখা।

১০. প্রতিটি পূজামণ্ডপ/মন্দিরের জন্য পরিদর্শন রেজিস্টার প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।

১১. প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত ও বিকল্প আলোর (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখা।

১২. পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের ব্যাগ বা পোটলা ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা। তাছাড়া পূজামণ্ডপ এলাকায় সন্দেহজনক কোনো ব্যাগ বা পোটলা পড়ে থাকতে দেখলে বা দৃষ্টিগোচর হলে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা।

১৩. ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখা এবং অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষ্যে আজান ও নামাজের সময় এবং মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।

১৪. পূজামণ্ডপ সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পূজামণ্ডপ ও আশপাশ এলাকায় মেলা না বসানো।

১৫. পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য ওয়াশরুমসহ স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা রাখা।

১৬. পূজার প্রসাদ প্রস্তুত করার সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং পূজামণ্ডপগুলোতে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।

১৭. পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক কোনো বিরোধ থাকলে তা পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে নিষ্পত্তি করা।

১৮. বিজয়া শোভাযাত্রায় উচ্চ বাদ্যযন্ত্র সেট (পিএ) ব্যবহার না করা।

১৯. শোভাযাত্রা চলাকালে যেন কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।

২০. প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা এবং বিসর্জনের সময় পানিতে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা, বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নৌকায় উঠা নিরুৎসাহিত করা।

২১. ২৪ অক্টোবর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা বেলা ৩টার আগেই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, সাড়ে তিনটার মধ্যে শোভাযাত্রা শুরু করা এবং সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে প্রতিমা ওয়াইজঘাটে পৌঁছানো। ওয়াইজঘাটে সব প্রতিমা রাত আটটার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন করা।

২২. কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা তৈরি হলে অতি দ্রুত পুলিশকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে পূজা উদযাপন কমিটির সংশ্লিষ্ট থানার ফোকাল পয়েন্ট অথবা ৯৯৯ এর সেবা গ্রহণ করা।

বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, এবার ঢাকা মহানগরীতে ২৪৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উপলক্ষ্যে মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহালয়া থেকে পূজার আগেরদিন পর্যন্ত এক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল, শুক্রবার (২০ অক্টোবর) থেকে ৫ দিনব্যাপী মহাষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমীতে বিসর্জন পর্যন্ত পুরো সময় ডিএমপি আনসার ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। পূজার আয়োজকদের সঙ্গে একাধিকবার আমাদের মিটিং হয়েছে, আশা করি পূজার দিনগুলো আমরা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো শঙ্কা নেই, তবে সব ধরনের শঙ্কা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব শঙ্কা মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

প্রস্তুত নৌ পুলিশ

যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নির্বাচনের আগমূহূর্তে এবারের দুর্গাপূজায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে জানিয়ে নৌ পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এবারের দুর্গাপূজা উপলক্ষে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়। যে কোনো প্রয়োজনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৌ পুলিশ সব সময় পাশে থাকবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো মহল ঝামেলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। প্রতিমা বিসর্জনের ক্ষেত্রে নৌ পুলিশ বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।

থাকছে র‌্যাবের বিশেষ চেকপোস্ট

শারদীয় দুর্গা পূজাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি বছরের মতো এবছরও র‌্যাব ফোর্সেস বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন সুসংহত করায় এ দুর্গাপূজা বর্তমানে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েরই উৎসব নয়, এটি এখন সার্বজনীন উৎসব।

দুর্গা পূজায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার (১৬ অক্টোবর) থেকে র‌্যাব ফোর্সেস সারাদেশব্যাপী চেকপোস্ট, গোয়েন্দা নজরদারি ও টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।

পূজা উপলক্ষে যেকোন ধরনের নাশকতা বা অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে রাজধানীর প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে র‍্যাবের চেকপোস্ট কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে ব্যাটালিয়নগুলোর নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় চেকপোস্ট স্থাপন ও টহল জোরদারসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক র‍্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

তিনি বলেন, দুর্গপূজা উপলক্ষে কোনো সুযোগ সন্ধানী, অশুভ চক্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কোনোরূপ হামলা, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর বা কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের চেকপোস্ট ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে সযোগ সন্ধানী ও দুষ্কৃতকারী নাশকতাসহ যেকোনো উদ্ভুত পরিস্থিতি কঠোরভাবে প্রতিহত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র‍্যাব।

দুর্গাপূজায় পুলিশের নিরাপত্তা পরামর্শ

শারদীয় দুর্গাপূজার পরিবেশে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ বেশ কয়েকটি পরামর্শ প্রদান করছে

এগুলো হলো- পূজামণ্ডপে আগত নারী ও পুরুষ দর্শনার্থীদের জন্য পৃথক প্রবেশপথ ও প্রস্থান পথের ব্যবস্থা রাখা। পূজামন্ডপে কোন ব্যাগ, থলে বা পোটলা নিয়ে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকা। পূজামন্ডপে সিসি ক্যামেরা ও অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র স্থাপন করা। গুরুত্বপূর্ণ পূজামন্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।

পূজামন্ডপে ও প্রতিমা বিসর্জনস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা। সম্ভব হলে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর, চার্জার লাইট, হ্যাজাক লাইট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা।  

পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা। স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয় পত্র ও স্বেচ্ছাসেবক লেখা আর্মড ব্যান্ড প্রদান করা। পূজা চলাকালে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো থেকে বিরত থাকা।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন- ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার অথবা ব্লগ ইত্যাদি এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন অমূলক ঘটনা বা গুজব সৃষ্টি করে কিংবা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সামাজিক শান্তি বিনষ্ট করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকা। এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে পুলিশকে অবহিত করা।

পূজা উদযাপনকালে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা। আজান ও নামাজের সময় মাইক ও বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখা।

প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রার নির্ধারিত রুট ব্যবহার করা। পূজামণ্ডপে শোভাযাত্রা এবং প্রতিমা বিসর্জনের সময় দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যদের দায়িত্ব পালনে সহযোগিতা করা। রাতের বেলায় পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম: ০১৩২০০০১২৯৯, ০১৩২০০০১৩০০, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কন্ট্রোল রুম : ০২-৫৫১০২৬৬৬, ০২-২২৩৩৮১১৮৮, ০২-৪৭১১৯৯৮৮, ০১৩২০০৩৭৮৪৫-৪৬, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) কন্ট্রোল রুম : ০২-৪৮৯৬৩১১৭, ০১৭৭৭৭২০০২৯ এবং 
ফায়ার সার্ভিস সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম : ০২-২২৩৩৫৫৫৫৫, ০১৭১৩০৩১৮১-৮২ নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সেবা পেতে টোল ফ্রি জাতীয় জরুরি সেবা '৯৯৯' নম্বরে কল করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী পুলিশ সদরদপ্তরের কোয়ার্টারলি কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে যাতে দুর্গাপূজা পালন করা যায় সেজন্য পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে হবে। কেউ যেন গুজব সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ক্ষেত্রেও সজাগ থাকতে হবে।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টিতে যারা বিরোধিতা করেছিল, তারা যা কিছু ভালো কাজ সেগুলোর বিরুদ্ধে আছে। এ সমস্ত দুষ্কৃতকারীরা সংখ্যায় খুবই কম। তারপরেও গুজবকারীরা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সে কারণে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।

যারাই গুজব ছড়াচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই আমরা তাদের শনাক্ত করে ফেলছি। কাজেই গুজব রটিয়ে তারা পার পাবে না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী সব দিকে দেখে খেয়াল রাখছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।