ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন নারীরা

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলায় মেতেছেন নারীরা

বগুড়া: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী এখন দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেওয়ার পালা। বিজয়া দশমীর তিথিতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর সময় সন্নিকটে চলে এসেছে।

বিদায় বেলায় বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে মণ্ডপে আনন্দের সঙ্গে দুর্গা মাকে সিঁদুরে রাঙ্গিয়ে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছে নারীরা। শহরের বিভিন্ন মন্দিরের চিত্র ছিল আনন্দময় ও উৎসব মুখর।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে শহরের দত্তবাড়ি, ডালপট্রি, চেলোপাড়া, মালতিনগর, জলেশ্বরীতলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার পূজা মণ্ডপে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

বিজয়া দশমীতে মন্দিরে মন্দিরে ঢাকের তালে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠে সব বয়সের বিবাহিত নারীরা। তাদের একে অপরকে রঙে রাঙ্গিয়ে আনন্দ উৎসব করে। আজকের দিনটিতে মা দুর্গাকে সিঁদুর দিয়ে তারপর নিজেরা একে অপরকে সিঁদুর দেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারীরা। এটি হিন্দু নারীরা দেবী দুর্গার আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভোর থেকেই শহরের দত্তবাড়ি, ডালপট্রি, চেলোপাড়া, মালতিনগর, জলেশ্বরীতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পূজা মণ্ডপগুলোতে বাজছে বিদায়ের সুর। সকাল থেকেই ভক্তরা দেবী দুর্গার দর্শন পেতে ছুটছেন মণ্ডপগুলোতে। শেষ বেলায় দেবী দুর্গার আরাধনায় ব্যস্ত ভক্তরা। বিদায় মুহূর্তে মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা মেতেছে সিঁদুর খেলায়। ভক্তরা একে অপরের কপালে সিঁদুর দিচ্ছেন। গালে গালে কেটে দেন সিঁদুরের আঁচড়। সব মন্দিরের চিত্র ছিল আনন্দময় ও উৎসবমুখর। মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছেন আর মনের বাসনা পূরণে মায়ের আশীর্বাদ কামনা করছেন।

এদিকে সকালে নির্ধারিত সময়ে উলু ধ্বনি, ঢাকের বাদন, কাশি, ঘণ্টা ও শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর যথা নিয়মে পুরোহিতের মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দেবী দুর্গার পূজা। আর বিভিন্ন ভোগ্য সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপে রাখা দেবী দুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন ভক্ত সাধারণ। বিজয়া দশমীতে পূজামণ্ডপগুলোতে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি সবার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কানায় কানায় ভরে যায় মণ্ডপগুলো।

বগুড়ায় চেলোপাড়ার নববৃন্দাবন হরিবাসর মন্দিরে সিঁদুর খেলতে ও দেবী দুর্গা মায়ের আশীর্বাদ নিতে আসা রানী চৌধুরী, মৌমিতা সেন, সোনালী রায় বাংলানিউজকে জানান, ধর্মীয় বিধানমতে দেবী দুর্গাকে ধরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। তাই সকলে বিজয়া দশমীতে মায়ের বিদায় বেলার আগ মুহূর্তে মায়ের আশীর্বাদ নিতে এসেছেন। তারা পূজা অর্চনা করেছেন এবং অতীত জীবনের পাপ মোচন ও অশুভ শক্তির কবল থেকে বাঁচতে দেবী দুর্গার কাছে আশীর্বাদ কামনা করছেন।

তারা বলেন, বিবাহিত নারীরা প্রত্যেক দুর্গোৎসবের বিজয়া দশমীতে সিঁদুর খেলে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা নাচে-গানে ও সিঁদুর খেলায় মেতে উঠেছে মন্তব্য তাদের।

এ বছর বগুড়া জেলায় মোট ১২টি উপজেলায় ৭০৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা ছাড়াই সবকটি মন্দির বা মণ্ডপে আনন্দ উৎসবের সঙ্গে দুর্গোৎসব পালন করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।

বগুড়া জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে বগুড়া সদরে ১২২টি, শাজাহানপুরে ৫০টি, শিবগঞ্জে ৬১টি, সোনাতলায় ৫৫টি, সারিয়াকান্দিতে ২৩টি, ধুনটে ৩৮টি, গাবতলীতে ৭৩টি, শেরপুরে ৯৪টি, নন্দীগ্রামে ৪৬টি, কাহালুতে ৩৭টি, দুপচাঁচিয়ায় ৪২টি এবং আদমদীঘিতে ৬৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে সিঁদুর খেলা ও মায়ের আশীর্বাদ ছিল আজকের দিনটিতে মোক্ষম বিষয়। অন্যদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে ঢাক-ঢোলের তালে প্রতিমা বিসর্জন দিতে সকলে হেঁটে বা ট্রাকে করে ছুটবে নদীর তীরে। বিদায় দিবেন দুর্গা মাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২৩
কেইউএ/এসএম
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।