ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

অবরোধে ক্যান্সারে আক্রান্ত বোনের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে বড় বোন

এসএমএ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
অবরোধে ক্যান্সারে আক্রান্ত বোনের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে বড় বোন

ঢাকা: বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিন ও বাম জোটের সকাল-সন্ধ্যা হরতালে যাত্রী সংকট থাকায় গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। অনেকেই গাবতলির বাস কল করে টিকিট নিশ্চিত করলেও সকালে এসে কাউন্টার বন্ধ পায়।

ঝিনাইদহ শহরের বাসিন্দা সোনিয়া বেগমও এভাবে টিকিটি নিশ্চিত করেছিলেন। না পাওয়ায় ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত ছোট বোনের চিকিৎসা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে গাবতলি বাস টার্মিনালে এসেছিলেন সোনিয়া। করছিলেন বাসের অপেক্ষা। তাকে দেখে কথা বলতে গেলে সোনিয়ার নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরেন বাংলানিউজের কাছে।

সোনিয়া বেগম বলেন, ঝিনাইদহ শহরেই আমাদের বাড়ি। ছোট বোনের চিকিৎসার জন্য আজ বাড়িতে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বোনের ব্রেস্ট টিউমার ধরা পড়েছে। ডাক্তার বলেছেন এটা ক্যান্সারে রূপ নিয়েছে। দ্রুত সময়ে অপারেশন করাতে হবে। এই রকম অবস্থায় বোনকে নিয়ে কীভাবে বাড়ি যাবো আবার ঢাকায় ফিরবো- তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি।

তিনি বলেন, একই রোগে আমার আরেক বোনের মৃত্যু হয়েছে কয়েকবছর আগে। আমার ছোট বোন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। গত সপ্তাহে তাকে মিরপুরের ডেলটা ক্যান্সার হাসপাতালে নিয়ে এসে বিভিন্ন ধরনের টেস্ট করাই। টেস্টের রিপোর্ট দিতে দেরি হবে ভেবে দুদিন আগে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিই। টেস্টের রিপোর্ট আসার পর ডাক্তার জানিয়েছেন সে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। শুক্রবারই তাকে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।

সোনিয়া বলেন, ডাক্তার বলেছেন দেরি করা যাবে না, তার অপারেশন জরুরি। ক্যান্সারের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল, হাতে টাকাও নেই। আমি বাড়ি গিয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে দ্রুত সময়ে বোনকে নিয়ে আসবো। কিন্তু এইরকম অবস্থায় কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। হরতাল, অবরোধ যাই হোক না কেন ঝিনাইদহে আমাকে যেতেই হবে। কিছু কিছু বাস ভেঙে ভেঙে আরিচা পর্যন্ত চলছে। এরপর নদী পার হয়ে এভাবেই যাবো কিছু করার নেই। কখন নিরাপদে পৌঁছাতে পারব সেই শঙ্কা তো থেকেই যাচ্ছে। অবরোধের কারণে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছি।

তিনি আর বলেন, অবরোধ না থাকলে দুদিন আগেই ঝিনাইদহে চলে যেতাম। বোনকে নিয়ে এসে হসপিটালে ভর্তি করতাম। এখন আসা-যাওয়ার মধ্যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই রোগে এক বোনকে হারিয়েছি আরেক বোনকে হারাতে চাই না। জানি না আল্লাহ পাক কপালে কি রেখেছেন। তারপরও শত বাধা পেরিয়ে হলেও বোনের চিকিৎসা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।

মা অসুস্থ, পরিবার নিয়ে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের গ্রামের বাড়ি যাবেন আরেক যাত্রী আমিনুল ইসলাম। কাউন্টারে এসে কোনো পরিবহন না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কীভাবে বাড়ি যাব? এক ঘণ্টা ধরে কাউন্টারে ঘোরাঘুরি করছি, সরাসরি কোনো গাড়ি চলছে না। তাই ভেঙে ভেঙে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাড়ি যেতে হবে ।

সকাল থেকে দূরপাল্লার গাড়িগুলো বাস টার্মিনালে প্রস্তুত। কিন্তু কোনোটিই যাত্রী না থাকায় গাবতলি ছেড়ে যায়নি। বেশির ভাগ কাউন্টার বন্ধ। দুয়েকটি খোলা থাকলেও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন।

এদিকে, জনগণের নিরাপত্তা দিতে সকাল থেকেই মঞ্চ করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গাবতলি বাস টার্মিনাল ও আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। মঞ্চগুলোয় ব্যান্ড সংগীত পরিবেশন হতে দেখা গেছে। জনগণের জানমাল রক্ষা ও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় সড়কের যান চলাচল কিছুটা কম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২৩
এসএমএকে/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।