ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘গাছ কাটলে ছাড় দেওয়া হবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
‘গাছ কাটলে ছাড় দেওয়া হবে না’ কথা বলছেন ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: ‘গাছের গুরুত্ব আমাদের অনুধাবন করতে হবে। দুঃখজনক হলো আমরা অনেকে গাছের গুরুত্ব বুঝি না।

পরিবেশ রক্ষায় এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য অক্সিজেন পেতে গাছের বিকল্প নেই। গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ’

শনিবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটোরিয়ামে নগর সবুজায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ হুঁশিযারি দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
 
তিনি বলেন, আমার কাউন্সিলর, ইঞ্জিনিয়ার ও কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি অনুমতি ছাড়া ডিএনসিসি এলাকায় কেউ গাছ কাটতে পারবে না। গাছ কাটার আগে এলাকাবাসী ও কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলাপ করতে হবে, আমাদের সাথে আলাপ করতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়কের ফুটপাতে গাছ লাগানো হচ্ছে। বিভিন্ন বস্তিতে প্রায় পাঁচ হাজার ৫শ’টি গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি গাছকে জিপিআরএস অ্যাপের মাধ্যমে আইডি নাম্বার দিয়ে লাগিয়েছি। গাছকে নাম্বারিং করা ও জিপিআরএস ম্যাপিং করা হচ্ছে। প্রকৌশল বিভাগ এটি তত্ত্বাবধান করছে। বর্জ্য বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি খালের পাড়ে গাছ লাগাতে হবে। আমরা এখন যে গাছগুলো লাগাচ্ছি একটা সময় পরে সবুজায়ন হবে, গাছে ফুল হবে, ফল হবে, গাছ ছায়া দেবে, অক্সিজেন দেবে।

মেয়র বলেন, গাছ লাগানো অনেক সহজ কিন্তু গাছের পরিচর্যা করে গাছগুলো বড় করে তোলা অনেক কঠিন কাজ। এখন পর্যন্ত আমরা যেসব গাছ লাগিয়েছি, আমাদের কাছে প্রতিটি গাছের ম্যাপিং আছে। গাছ কত ইঞ্চি লাগানো হয়েছে, গাছ কিভাবে বড় হচ্ছে ও গাছের পরিচর্যা করা হচ্ছে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। গাছগুলোর পরিচর্যা করা হচ্ছে। আজকে গাছ লাগালে অবশ্যই এর দুই বছর পরে ফল পাওয়া যাবে। আমি নতুন কিছু গাছ লাগাচ্ছি। রসকাউ গাছ রোপণ করছি। রসকাউ গাছের ফল পাখির খুবই প্রিয়। আমরা সবুজ ও পাখির কিচিরমিচির দেখতে চাই।

তিনি বলেন, ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন করতে সবুজায়ন প্রকল্পের পাশাপাশি স্ট্রিট আর্ট করে দিচ্ছি। মগবাজার ফ্লাইওভারের পিলারে স্ট্রিট আর্ট করা হয়েছে। মিরপুর জল্লাদখানায় পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করে কূয়ার ভেতরে ফেলে রেখেছিল। সেটি ছিল খুবই ভয়ানক একটি জায়গা। ওখানে ময়লার ভাগাড় ছিল, মাদকাসক্তরা সেখানে নেশা করত। আমরা জল্লাদখানাটি দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়েছি। আপনারা গেলে দেখতে পাবেন শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, কোনো জায়গায় কোনো প্রজাতির গাছ লাগানো হবে এটি জানা খুব জরুরি। শহরে রাস্তায় একসময় শুধু ছায়া দেবে এমন জাতের গাছ লাগানো হত, পরবর্তীতে ফুল ও ফলের গাছও লাগানোর সিদ্ধান্ত হয়। শহরের সবুজায়নে সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে বিশেষ করে কাউন্সিলরদের। তাদের এই গাছগুলো দেখে রাখতে হবে। তবে জনগণের যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। প্রতিটি বাড়ি, অফিস ভবন শীতল রাখতে ছাদে গাছ লাগাতে হবে।  সড়কের মিডিয়ানে গাছ, চিত্রকর্ম দেখলে অনেক ভালো লাগে৷ এটি দারুণ উদ্যোগ।

শক্তি ফাউন্ডেশনের উপ-নির্বাহী পরিচালক ইমরান আহমেদ বলেন, সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশ একদিকে যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এর সম্মুখীন হচ্ছে। বায়ু দূষণে ঢাকা শহরের অবস্থান বিশ্বের প্রথম সারির দিকেই। আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা শহরকে দূষণমুক্ত ও সুন্দর করে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার এবং তাই শক্তি ফাউন্ডেশন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, মেটলাইফসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।  

এরপরে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম অন্যান্য অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে ফিতা কেটে সবুজায়ন প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন এবং মিডিয়ানের গাছ ও চিত্রকর্ম ঘুরে দেখেন।

উল্লেখ্য, নগর সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় শক্তি ফাউন্ডেশন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশনের যৌথ সহযোগিতায় ডিএনসিসির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামের সামনে থেকে জাহাঙ্গীর গেট এবং বিজয় সরণির মোড় থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১৭০০০ শোভাবর্ধনশীল গাছ রোপণ করা হয়েছে এবং গ্রাফিতির মাধ্যমে সাজানো হয়েছে নান্দনিক সাজে। এখানে রোপণ করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এর তত্ত্বাবধায়নে এই প্রকল্পের আওতাধীন এলাকা আগামী এক বছর রক্ষণাবেক্ষণ করবে শক্তি ফাউন্ডেশন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফুল ইসলাম, চার নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জামাল মোস্তফা, সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর হামিদা আক্তার (মিতা), মেটলাইফ বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আলা আহমেদ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এমএমআই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।