ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মিধিলি: মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব মেঘনার বেদে সম্প্রদায়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট     | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
মিধিলি: মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে নিঃস্ব মেঘনার বেদে সম্প্রদায়

লক্ষ্মীপুর: মেঘনার পাড়ে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছেন ফরিদা বেগম (৬৫) নামে বেদে (মানতা) সম্প্রদায়ের এক নারী। কারণ ঘূর্ণিঝড় মিধিলি মেঘনায় ভেসে থাকা তার নৌকা কেড়ে নিয়েছে।

ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের লোকজনের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। সেখানে তাদের বাসস্থান ও কর্মসংস্থান। কিন্তু সেই নৌকাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব এ নারী। অর্থ, সম্বল ও ব্যবহারের জিনিসপত্রও ছিল এ নৌকাতে। সবই হারিয়েছেন তিনি। পরিবারের আরও পাঁচ সদস্যদের নিয়ে কোথায় থাকবেন সে চিন্তাই এখন চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন এ নারী।  

জানা গেছে, গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির তাণ্ডবে মেঘনায় বেদে সম্প্রদায় তাদের ২০-২৫ নৌকা ডুবে যায়। সেই সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি নৌকা জোয়ারের পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হয়।  

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধের পাশে অন্তত ৪০টি বেদে (মানতা) সম্প্রদায়ের বসবাস। মেঘনা নদীতে নৌকা ভাসিয়ে থাকেন তারা। প্রায় ৪০টি নৌকাতে ২ শতাধিক নারী-পুরুষ শিশুর বসবাস। নৌকা শুধু তাদের বাসস্থান নয়, নৌকা তাদের আয়ের উৎস। নৌকাতে করে মেঘনায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।  

ফরিদা বেগম বলেন, আমার কিছুই আর রইল না। কিছু খাওয়ার টাকাও নেই, নেই থাকার জায়গাটুকুও। নতুন নৌকা বানানোর টাকাও নেই, কীভাবে চলব? যেটুকু অর্থ ছিল, তা নদীতে ভেসে গেছে। এখন অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে আমাদের।  

কান্না জড়িত কণ্ঠে ভাসমান জেলে রমজান জানান, তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু ঝড়ে শেষ করে দিয়েছে।  

তিনি বলেন, আমাদের নৌকায় জন্ম, বিয়ে, বাজনা, থাকা-খাওয়া। এখন সব শেষ। কী করব, কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারছি না। অর্থ, জামা-কাপড় সব নৌকার মধ্যে ছিল। নৌকাসহ সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন আমাদের দেখবে কে?

একই কথা জানালেন ঝড়ে নৌকা হারানো বেদে সম্প্রদায়ের সকিনা, নুরী, কমেলাসহ বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ। নৌকা হারিয়ে নিঃস্ব এখন তারা। রাতে কোথায় মাথা গোঁজাবেন- সে নিশ্চয়তা নেই এদের। তাই অসহায় চোখে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ভাসমান এ সম্প্রদায়ের লোকজনকে।  


চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন বলেন, ভাসমান জেলেরা নদীর তীরে ছোট ছোট নৌকাতে বসবাস করেন। পাশাপাশি মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ঝড়ের তাণ্ডবে বেশ কিছু নৌকা ডুবে গেছে, আবার বেশ কিছু নৌকা ভেঙে গেছে। সবমিলিয়ে ওই এলাকায় অর্ধশতাধিক নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  

এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। ভাসমান বেদে জেলেদের একটি স্কুল ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।