ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমার ছেলের মরদেহ আমারে দিয়ে যান’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
‘আমার ছেলের মরদেহ আমারে দিয়ে যান’

বাগেরহাট: ‘কবর দেওয়া মরদেহ যদি হিল্টনের না হয়, তাহলে আমার ছেলে মরদেহ কোথায়? আমার ছেলের মরদেহ আমারে দিয়ে যান। তারপরে মরদেহ উঠিয়ে নিয়ে যান।

আমার দাবি এটুকুই। ’ 

সোমবার (২০ নভেম্বর) বেলা ১১টায় নিখোঁজ ব্যবসায়ী মাহে আলমের মরদেহ উত্তোলনের সময় এভাবেই বিলাপ করছিলেন নিখোঁজ হিল্টন নাথের মা বীথিকা নাথ।  

এদিন মোংলার চিলা গ্রামে হিল্টন নাথের সমাধি থেকে মোংলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবিবুর রহমান, সহকারী পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার, মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুদ্দিনসহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে মাহে আলমের মরদেহটি উত্তোলন শুরু হয়।

এসময় ঘরের কোণে বসে কাঁদছিলেন মা বীথিকা নাথ। সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এত দিন ভাবিছি আমার তা (ছেলে) আমার কোলের ধারে রাইছে। এখন আমি কি করে থাকবো। ...ওরে আমার বাবা রে। আপনারা আমার বাবাকে এনে দেন’

সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে মরদেহটি হিলটনের নয়, মাহে আলমের। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা মরদেহ তুলে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।

হিলটনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে যেহেতু ধারণা করা হয়েছিল এটি হিলটন নাথের মরদেহ, তার পরিবার একটু সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করেছিল। এখন যেহেতু এটা প্রমাণিত হয়েছে এটা মাহে আলমের মরদেহ সেহেতু হিলটন জীবিত না মৃত এ বিষয়ে আমর কেউ নিশ্চিত নই। বিষয়টি নিয়ে খুলনা পিবিআই তদন্ত করছে। হিলটনকে খোঁজে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ এপ্রিল সুন্দরবনে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হন চিলা এলাকার হিলটন নাথ। অন্যদিকে ১০ এপ্রিল মোংলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহে আলম বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে ১৩ এপ্রিল সুন্দরবনের করমজলে একটি অজ্ঞাতনামা মরদেহ পাওয়া যায়। হিলটন নাথের মা বিথিকা নাথের দাবির প্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল দাকোপ থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে অজ্ঞাতনামা মরদেহটি তার কাছে হস্তান্তর করে। হিলটন নাথ হত্যার বিষয়ে খুলনার দাকোপে এবং মাহে আলম নিখোঁজ বিষয়ে বাগেরহাটের মোংলা থানায় দুটি পৃথক মামলা হয়।  

কিন্তু মাহে আলমের পরিবারের লোকজন মরদেহটি মাহে আলমের বলে দাবি করেন। পরে নিখোঁজ মাহে আলমের ছেলে সুমন রানার আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল আমলি আদালত হিলটন হিসেবে সমাহিত মরদেহটির ডিএনএ পরীক্ষার আদেশ দেন। পরে হিলটন নাথের মা বীথিকা নাথ ও সুমন রানার ডিএনএ পরীক্ষার পর জানা যায়, মরদেহটি মাহে আলমের।

এ অবস্থায় সাত মাস পর আদালত গত ৮ নভেম্বর হিল্টন নাথ হিসেবে সমাহিত মরদেহ উত্তোলন করে মাহে আলমের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খোকন।

আরও পড়ুন: অবশেষে নিজ ঠিকানায় ঠাঁই হলো মাহে আলমের

বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।