ঢাকা, বুধবার, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

হরতাল-অবরোধে সহিংসতা করে বিএনপির ৮ টিম: ডিবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২৩
হরতাল-অবরোধে সহিংসতা করে বিএনপির ৮ টিম: ডিবি ফাইল ফটো

ঢাকা: গত ২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে বিএনপি। তাদের সমর্থন জানিয়ে একই কর্মসূচি ঘোষণা করছে জামায়াতে ইসলামীর মতো সমমনা দলগুলো।

হরতাল-অবরোধের শুরু থেকেই জনসম্পৃক্ততা না থাকলেও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। বেশিরভাগ সময়ই এ ধরনের সহিংসতায় চোরাগোপ্তা হামলা চালানো হচ্ছে।

তবে হামলার সময় হাতেনাতে অনেককে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার অনেককে ঘটনার পর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

গ্রেপ্তাররা পুলিশি রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তারা কার নির্দেশে এবং কতো টাকার বিনিময়ে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন অকপটেই বলেছেন আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানায়, হরতাল-অবরোধে সহিংসতা চালিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে বিএনপি আটটি টিম গঠন করেছে। যারা সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে পৃথক পৃথক কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, সহিংসতার জন্য ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপি আটটি সন্ত্রাসী টিম গঠন করেছে। যাদের কাজ ঝটিকা মিছিল ও ভাঙচুর করা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা, ককটেল বিস্ফোরণ করা, ছবি ভিডিও ধারণ করে পৌঁছে দেওয়া বা ঊর্ধ্বতন নেতাদের নির্দেশে অন্যান্য যে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা।

এসব টিম বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন নির্দেশনা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করে আসছে। সন্ত্রাসী এ টিমগুলোকে পরিচালনা করতে কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, মহানগর যুবদলের নেতা, থানা এবং ওয়ার্ড ভিত্তিক বিভিন্ন পর্যায়ে নেতারা রয়েছেন।

ডিবি জানায়, গত ২৯ অক্টোবরে গুলিস্থান থেকে সদরঘাট যাওয়ার পথে তাঁতীবাজার মোড় এলাকায় বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় অগ্নিসন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার রাজিব হোসেন বিল্লাল ইতোমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি আদালতকে জানিয়েছেন কীভাবে, কাদের মদদে বাসে আগুন লাগানো হয়েছে।

বিল্লালের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারা জবানবন্দি, সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি লালবাগ বিভাগ বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) বিএনপির আরও দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- সাবেক ছাত্রদল সভাপতি হাজী পারভেজ, কোতোয়ালি থানার যুবদল সভাপতি পদ প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সচিব মাহফুজুর রহমান।

গ্রেপ্তাররা বর্তমানে চার দিনের রিমান্ডে ডিবি হেফাজতে রয়েছেন। তারা রিমান্ডে অকপটে নিজেদের অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে ডিবি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিবির আরেক কর্মকর্তা জানান, বিএনপির এ নেতারা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলা থেকে সমমনা দিনমজুর, খেটে খাওয়া লোকদের দৈনিক ভাড়া চুক্তিতে সহিংসতার কাজে ব্যবহার করছে। তাদের ঢাকায় এনে কোমল পানীয়ের বোতলে বা অন্যান্য কন্টেইনারে কেরোসিন ও পেট্রল সরবরাহ করে। এরপর ভাড়া করা লোকজনদের চলন্ত গাড়িতে যাত্রী হিসেবে উঠিয়ে পেছন দিক থেকে আগুন লাগিয়ে দ্রুত নেমে ও পালিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। কখনো তাদের নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরে ঘুরে থামিয়ে রাখা যানবাহনে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

ভাড়া করা লোক দিয়ে বিএনপি নাশকতা চালাচ্ছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ বলেন, বিএনপির নেতারা মাঠে সক্রিয় থাকতে না পেরে ঘরে বসে বিভিন্ন জায়গা থেকে দিনমজুর ঢাকায় এনে নাশকতা করাচ্ছে। ঢাকার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতারা আটটি ভাগে ভাগ হয়ে এই নাশকতা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

এদের এক গ্রুপ ককটেল সাপ্লাই করে। আরেক গ্রুপ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। আর এসব কাজের জন্য তাদের বড় ভাইরা টাকা দেন। ঢাকার বাইরে থেকে কিছু দিনমজুর আসে, যারা ডেইলি বেসিসে কাজ করে। নেতারা ঘরে বসে থেকে দিনমজুর মানুষগুলোকে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেকে এনে তাদের টাকা দিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন লাগানোর মতো ঘটনা ঘটায়।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ৩০০ টাকায় দিনমজুর ঢাকায় এনে নাশকতা করান বিএনপির নেতারা। আর গাড়ি পোড়ানো ও ভাঙচুরের ছবি নেতাদের মোবাইলে পাঠালেই তারা ৩-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পায়।

ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে রয়েছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, মানুষ এখন কোনোভাবেই আতঙ্কগ্রস্ত না। আমরা এখন নির্বাচন কমিশনের দিক-নির্দেশনায় কাজ করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমাদের পর্যাপ্তসংখ্যক সদস্য কাজ করছে।

সুষ্ঠু-স্বাভাবিক ও সুন্দর নির্বাচনের জন্য যারা সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত ও এফআইআরভুক্ত আসামি, পুলিশ হত্যার আসামি, প্রধান বিচারপতির বাসভবন হামলা-মামলার আসামি যে যেই হোক না কেন তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ করেন ডিবি প্রধান হারুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২৩
পিএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।