ঢাকা: গত বছর ঢাকার আদালত চত্বর থেকে দুর্ধর্ষ দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানতেন আনসার আল ইসলামের প্রধান সমন্বয়কারী ইসহাক। জঙ্গি ছিনতাইয়ের আগেই তাদের সঙ্গে কারাগারেই ইসহাকের যোগাযোগ ছিল।
তবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার ইসহাক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে দুই জঙ্গির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি।
সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, কাশেমপুর কারাগারে আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও স্বজনদের দেখা করিয়ে দেওয়ার কাজ করতেন ইসহাক। নিষিদ্ধ এই দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে পরিচিত পান তিনি। ইসহাকের নির্দেশে অবৈধভাবে সীমান্ত পথে পার্শ্ববর্তী দেশে যায় চার জঙ্গি সদস্য। তাদের প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছিল। তবে এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে গ্রেপ্তার হন তারা।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আমির আবু ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল ইসহাকের। তার নির্দেশেই নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতেন ইসহাক।
দাখিল পর্যন্ত পড়াশুনা করা গ্রেপ্তার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবা ২০১৫ সালে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। বিভিন্ন পেশার আড়ালে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
তিনি সংগঠনের হয়ে রাজধানীর আশুলিয়া, সাভার, মানিকগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। আনসার আল ইসলামের বর্তমান আমির আবু ইমরানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ইসহাকের। আমীরের নির্দেশেই তিনি এসব অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।
অনলাইনে নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন ইসহাক
র্যাবের মুখপাত্র খন্দকার আল মঈন, অনলাইন মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও জিহাদে উদ্বুদ্ধ করে সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করতেন। তার নির্দেশে সংগঠনের নতুন সদস্যদের গাজীপুর, টঙ্গি ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন আনসার হাউজে তাত্ত্বিক ও শারীরিক কসরতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গোপনীয় অ্যাপস ব্যবহার করে সংগঠনের শীর্ষ স্থানীয় নেতাসহ অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি নেতাদের থেকে নির্দেশনা নিতেন এবং সংগঠনে তার অনুসারীদের দিকনির্দেশনা দিতেন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তাররা বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও উগ্রবাদী নেতাদের বক্তব্যের ভিডিও সরবরাহ করতেন। এছাড়াও তারা সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভুল তথ্য দিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন মাদরাসা ও সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থ সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন সময়ে তারা মসজিদ, বাসা বা বিভিন্ন স্থানে সদস্যদের নিয়ে গোপন সভা পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। পাশের বিভিন্ন দেশের সমমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যোগাযোগ রাখতেন এবং তারা সংগঠনের সদস্যদের তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে পাঠানো হত।
এরআগে, রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আঞ্চলিক প্রধান সমন্বয়কারী ও প্রশিক্ষণ শাখার প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে ইসহাক ওরফে সাইবাসহ (৪১) ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১।
গ্রেপ্তার বাকি জঙ্গি সদস্যরা হলেন মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে মুরাদ (৩১), আশিকুর রহমান ওরফে উসাইমান (২৭), মুহাম্মদ জাকারিয়া ওরফে আবরার (২৪), মো. আল আমিন ওরফে রবিন ওরফে সামুরা (২৪), মো. আবু জর ওরফে মারুফ (১৮)। অভিযানে তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদি ও উগ্রবাদী বই এবং অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
এসজেএ/এসআইএ