খুলনা: স্বাধীনতার ৫২ বছরেও স্বীকৃতি পাননি একসঙ্গে ৬ জন স্বজন হারানো খুলনার ফুলতলার মহাতাব উদ্দিন মল্লিক (৬৫)। স্বজন হারানো আর বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত আজও মনে করিয়ে দেন সেদিনের সেই ভয়াবহ দিনের কথা।
মহাতাব উদ্দিন ফুলতলা উপজেলার ২ নং দামোদর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ৬৯ নং হোল্ডিংয়ের পূর্ব বরন পাড়া গ্রামের মৃত মো. সাজেম মল্লিকের ছেলে।
সেদিনের সেই ভয়াবহ দিনের কথার বর্ণনা দিতে গিয়ে মহাতাব উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পাকিস্তানি বিমান থেকে নিক্ষেপ করা বোমায় তছনছ হয়ে যায় আমার পরিবার। ঘর-বাড়ি, দালান-কোঠা, গাছ-পালা, গরু-ছাগল, সোনার সংসার সব ধ্বংস হয়ে যায়। সেই হামলায় প্রাণ হারায় আমার বাবা মো. সাজেম মল্লিক, আমার দাদা মো. আমীর আলী মল্লিক, আমার বড় ভাই মো. খোশদেল মল্লিক, আমার মেজো ভাই মো. নজির মল্লিক, আমার মেজো ভাবী আবিদা সুলতানা, আমার মেজো ভাইয়ের একটি মেয়ে নূরজাহান। একই সাথে নিহত আমার পরিবারের ৬ জনমানুষ। আর বেঁচে থাকা আমার মা শেষ পর্যন্ত পাগল অবস্থায় মারা যান চিকিৎসার অভাবে। আমার মা দুনিয়া থেকে বিদায় নিল ভাইদের মধ্যে বেঁচে রইলাম একা আমি।
আবেগতাড়িত হয়ে তিনি আরও আরও বলেন, সেদিনের সেই হামলায় আমারও শরীর ক্ষতবিক্ষত। বোমার বিষাক্ত লোহার চূর্ণ আমার কপালে ঢুকে যায় এবং বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত হয়ে যায় আমার একটা দাঁতও ভেঙে যায়। তারপরও মহান আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বেঁচে থেকে কী লাভ হলো পেলাম না কোনো শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি, পেলাম না কোন মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। পেলাম না কোনো ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়। পাকা বিল্ডিং, গোলা, ঘর সব গেল। মনে হচ্ছিল কোনো ধ্বংসস্তূপ না হয় শ্মশান। তৎকালীন সরকার প্রধান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বরাবরে কয়েকবার আবেদন করা হয়েছিল কিন্তু ভাগ্যে জুটলো না। বিভিন্ন নেতাকর্মীর মুখে শুনেছিলাম যে, উনি খুব তাড়াতাড়ি তদন্তে আসবেন কিন্তু সেটাও ভাগ্যে জুটলো না। উনিও শহীদ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। সর্বশেষ আশা ভরসা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনিই হয়ত আমাদের এই বিষয়টাকে সুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করবেন।
দামোদর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোঞ্জেল সরদার বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর খুলনার ইস্টার্ন জুট মিলে ৬টা ন্যাটাম বোমা মারতে গিয়ে ভুল করে পাকিস্তানি বাহিনী মহাতাবদের বাড়িতে মারে। ওই মিলে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর মিটিং ছিল। সেদিনের আক্রমণে এ পরিবারের ৬ সদস্য নিহত হয়। স্বাধীনতার সংগ্রামে এ পরিবারটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এ পরিবারটিকে অন্তত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার। কিন্তু আজও স্বীকৃতি পায়নি ৭১’এ ৬ স্বজন হারানো মহাতাবের পরিবার।
ফুলতলা উপজেলার ২নং দামোদর ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন ,স্বাধীনতার এতোটি বছর পার হওয়ার পরও আজও স্বীকৃতি পায়নি ৭১’এ ৬ স্বজন হারানো মহাতাবের পরিবার। সরকারের কাছে দাবি জানাই অবিলম্বে এই পরিবারটিকে যেন সম্মান সূচক স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২৩
এমআরএম/এসএএইচ