ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাদারীপুরে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
মাদারীপুরে খেজুর রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

মাদারীপুর: শীতের সকালে গ্রামীণ মেঠো পথে খেজুর গাছে ঝুলে থাকে রসের হাঁড়ি। দুধারে খেজুর গাছ থেকে রসের হাঁড়ি নামাতে ব্যস্ত গাছি।

শীত উপেক্ষা করে খেজুর রসে চুমুক দিতে নানা বয়সীদের ভিড়। এক হাঁড়ি রস কিনে বাড়ির পথে গমন অতিথি আপ্যায়নে। বাংলার এমন চিত্র এখন আর দেখা মেলে না। খেজুর গুড়ে এক সময় মাদারীপুর জেলার বিশেষ পরিচিতি থাকলেও তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

গ্রামীণ মেঠো পথ দখলে এখন আধুনিক সড়ক। পথের দুই ধারে খুব একটা দেখা মেলেনা খেজুর গাছের। যা আছে তা কেটে পর্যাপ্ত রস পাওয়া যায় না। প্রকৃতিগত পরিবর্তনের কারণে খেজুর গাছ থেকে রসও পড়ে খুব কম। ৪/৫টি গাছ নিয়ে পাওয়া যায় এক হাঁড়ি রস। এভাবেই দিন দিন অপ্রতুল হয়ে উঠেছে খেজুর রসের। এতে খাঁটি খেজুর গুড় বাজারে পাওয়া এখন দুর্লভ!

জানা গেছে, মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলা, রাজৈর, শিবচরের প্রত্যন্ত এলাকায় শীতের শুরু থেকেই খেজুর গাছ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে গাছিরা। নতুন হাঁড়ি পেতে রস সংগ্রহ করে থাকেন তারা। খেজুর রস তৈরি করে বাজারে বিক্রিই মূলত এসব গাছির মূল পেশা। এখন আর বাজারে রস খুব একটা বিক্রি হয় না। রসের পরিমাণ কম হওয়ায় প্রতি হাঁড়ি রসের বাজার দর তিন/পাঁচ শত টাকা। দুই/তিন দিন আগে অর্ডার করলে এক হাঁড়ি রস পাওয়া যায়। তবে গাছিরা কাঁচা রস এখন আর বিক্রি করতে চান না। গাছ কেটে যে রস বের হয়, তাতে খেজুর গুড় তৈরি করেন তারা। তবে বেশি দামে খাঁটি গুড়ের ব্যবস্থা করতে পারেন গাছিরা। এছাড়া খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া গুড় খাঁটি হওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারেন না বিক্রেতারা।  

রহিম খান নামের শিবচরের নিলখী এলাকার এক গাছি জানান, দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। তাছাড়া গাছে রসও কম পড়ে। তিন থেকে চার গাছের রস নিয়ে এক হাঁড়ি হয়।

তিনি আরও জানান, কাঁচা রস এখন তেমন কেউ কিনে না। রস যা পাই তা দিয়েই গুড় তৈরি করা হয়। খাঁটি গুড়ের দাম তুলনামূলক বেশি। অনেকেই অগ্রিম অর্ডার করে গুড় নেয়।

স্থানীয়রা জানান, খেজুর রসে নিপা ভাইরাস থাকতে পারে এমন আশঙ্কায় কাঁচা রসের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে অনেকেই। তাছাড়া এক হাঁড়ি রস বর্তমানে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা করে বিক্রি হয়। তাও আগেভাগে অর্ডার দিয়ে রাখতে হয়। তাছাড়া বাজারে খাঁটি খেজুর গুড় মান ভেদে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এবং সাধারণ খেজুর গুড় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করেও কেনা যায়।

মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ বছর আগে মাদারীপুর জেলায় প্রায় ৭৫ হেক্টর জমিতে ৮৪ হাজার ৯৮৫টি খেজুর গাছ ছিল। বর্তমানে সেখানে ৪৫ হেক্টর জমিতে ৪৭ হাজার ৭৩১টি খেজুর গাছ রয়েছে। দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। তবে কৃষকদের খেজুর গাছ চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

গত কয়েকদিন ধরেই গ্রামে বেড়েছে শীতের প্রকোপ। আর শীতের মাত্রা বেশি হলেই নাকি খেজুর রস আরও বেশি সুমিষ্ট হয়। গাছ কমে যাওয়া, গাছ কাটা পেশায় যারা আছেন, তাদের সংখ্যাও দিন দিন কমে গেছে। গাছ কম থাকায় এখন আর গাছ কেটে রস নামিয়ে গুড় তৈরি করে আর্থিকভাবে খুব একটা লাভবান হন না বলে জানান এই এলাকার গাছিরা। তারপরও শীত মৌসুমে এলেই ব্যস্ততা শুরু হয় গ্রামের প্রান্তিক এই গাছিদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।