ফরিদপুর: ফরিদপুরে ডিসি অফিসের রেকর্ড রুমের মূল ফটকের কাঠের দরজার কব্জা ও ভেতরে অফিস কক্ষের তালা ভেঙে চুরি হওয়া ১২টি ল্যাপটপের মধ্যে ১১টি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় চুরি ও চোরাই ল্যাপটপ কেনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত রোববার দিবাগত রাতে ডিসি অফিসের রেকর্ড রুমে চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলা হওয়ার একদিনের মধ্যে রেকর্ড রুম থেকে চুরি হওয়া ১১টি ল্যাপটপসহ এ চোরচক্রের সদস্য ও ক্রেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়- গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পেশাদার চোর ফরিদপুর শহরের চর কমলাপুর এলাকার সুলতান মুন্সী (২৬), শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার সহিদুল শেখ (২২) ও শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার পারভেজ শেখ (২২) এবং চোরাই ল্যাপটপ ক্রেতা ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার বিনোকদিয়া এলাকার বাসিন্দা শহরের ধানসিঁড়ি হোটেলের ওয়েটার মো. লিয়ান শেখ (৩০) ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকার উত্তর দৌলতদিয়া এলাকার মীম খান (৩০)।
অভিযানের বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, প্রথমে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের লক্ষ্মীপুর মহল্লার পারভেজ খানের বাসা থেকে পারভজ খান ও সুলতান মুন্সিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে সুলতানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের চরকমলাপুর মহল্লায় তার বাড়ি থেকে চারটি ল্যাপটপ, চোরাই মোবাইল ফোন, চোরাই কাজে ব্যবহৃত একটি সেলাই রেঞ্জ, একটি লোহার হাতুড়ি ও একটি লোহার রড জব্দ করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সহিদুলকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। পরে শহরের আলীপুর থেকে লিয়নকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তিনটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। এরপর দুটি ল্যাপটপসহ শামীমকে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা জানায়, গত রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় রেকর্ড রুমের দরজার তালা ও দরজা সেলাই রেঞ্জ, লোহার রড ও হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে রুমের ভেতরে ঢুকে ল্যাপটপ ও মোবাইল চুরি করে নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার জানান, এ ল্যাপটপ চুরির ঘটনায় জড়িত তিন সদস্য মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্যই তারা চুরির পথ বেছে নেন। এর মধ্যে সুলতান মুন্সির নামে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় পাঁচটি এবং পারভেজ শেখের নামে ১২টি মামলা রয়েছে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায়। এসব মামলার বেশির ভাগই মাদক সংক্রান্ত।
সংবাদ সম্মেলন চলাকালে যোগ দেন রেকর্ড রুমের দায়িত্বে নিয়োজিত ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. লিটন আলী ও এ চুরির ঘটনায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) রামানন্দ পাল।
এসময় এডিএম রামানন্দ পাল জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। কীভাবে চুরি সংগঠিত হয়েছে এবং কোথায় কোথায় দুর্বলতা রয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. লিটন আলী বলেন, রেকর্ড রুমে যে সিসি ক্যামেরা ছিল তা নাইট মুড না থাকায় ততটা কার্যকর ছিল না।
তিনি বলেন, রেকর্ড রুমের যে সব দুর্বলতা রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শৈলেন চাকমা (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাহউদ্দিন, ট্রাফিক পরিদর্শক তুহিন লস্কর, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুর গফফার এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুজন বিশ্বাসসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময়ে ডিসি অফিসের রেকর্ড রুমে এ চুরির ঘটনা। এ ব্যাপারে ফরিদপুরের রেকর্ড কিপার মো. আবু বকর সিদ্দীক (৫২) বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২৩
আরএ